পাঁচদিন ধরে জ্বর ইশহাকের। কোনোভাবেই কমছিল না। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে দেখানোর পর ডাক্তারের পরামর্শে ভর্তি হন হাসপাতালে। জায়গা মেলে বারান্দায়। প্রথম দিনই রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরদিন আবার পরীক্ষা করতে দেয়া হয় সিবিসি ও ডেঙ্গু টেস্ট। কিন্তু পরীক্ষার ২ দিনেও রিপোর্ট হাতে পাননি হাসপাতালে সাথে থাকা তার দুলাভাই মো. দাউদ মিয়া।
Advertisement
তিনি বলেন, এখানে লম্বা লাইন। লাইন পেরিয়ে শুধু কাউন্টারে পৌঁছাতেই সময় লাগলো সাড়ে তিন ঘণ্টা। এরপর কাউন্টার থেকে বলা হলো দুপুর ১টায় আসেন। কিন্তু দুপুরে গিয়ে আবার জানলাম, আজ রিপোর্টই হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সন্ধ্যায় কিংবা আগামীকাল সকালে যোগাযোগ করতে হবে।
শুধু ইশহাক নয়, হাজার হাজার রোগীর স্বজনদের রিপোর্ট পেতে ভোগান্তি চরমে উঠেছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে।
তবে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ বলছেন, সরকার ডেঙ্গু টেস্টের ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে ফি ফ্রি ঘোষণার পর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চাপ বেড়েছে ৫ গুণ। যে কারণে লম্বা সিরিয়ালে যেমন রোগী কিংবা রোগীর স্বজনদের দাঁড়াতে হচ্ছে, তেমনি প্যাথলজি বিভাগেও বেড়েছে ব্যস্ততা। একই জনবলে ৫ গুণ রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া অসাধ্য হয়ে পড়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন > তরুণ-তরুণীরাই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের অধিক ঝুঁকিতে
সামনে এগুতেই দুই দিক থেকে প্যাভলজি বিভাগের সামনে লম্বা দুটি লাইন। রোগীর স্বজনরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পেতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গরমে ঘামছেন, অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘন্টা। এর মধ্যে কেউ রিপোর্ট পাচ্ছেন কেউ বা পাচ্ছেনই না।
কল্যাণপুর নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘ছেলের জ্বর। হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়েছি গতকাল। ডাক্তার ডেঙ্গু টেস্টসহ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন। রিপোর্ট নিয়ে ফের দেখা করতে বলেছেন ডাক্তার। গতকাল বিকেলেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পাইনি। রিপোর্ট পাওয়ার আশায় আজ সকালে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর ফের ডাক্তার দেখাতে হবে।’
পারভেজ নামে আগারগাঁও এলাকার এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, গত ২৭ তারিখ এখানে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হই। ডাক্তার ডেঙ্গুর টেস্ট দিয়েছেন। আজ ৩০ জুলাই, কিন্তু রিপোর্ট পাইনি। জ্বর নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
Advertisement
মঙ্গলবার হাসপাতালের ১ নং ওয়ার্ডের রোগী মেহেদি হাসানের (১৫) মা রুপা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ছেলের ৪ দিন ধরে জ্বর। ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রির মধ্যে জ্বর উঠানামা করছিল। কোনোভাবেই কমছিল না। বাধ্য হয়ে ওইদিন রাত ১২টায় এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দায়। ডাক্তাররা খোঁজ নিচ্ছেন, নার্সরা আসছেন যাচ্ছেন। সার্বক্ষণিক মশারি টাঙিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রচণ্ড গরম। উপরে ফ্যান নেই। মানুষের ভিড়ও বেশি। সব মিলে বেশ কষ্টের মধ্যেই আছি। হাজারও রোগী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে এই রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে ভোগান্তির শিকার বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন > ডেঙ্গু টেস্ট ফি বেশি নিলে অভিযোগ করবেন যেভাবে
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার ডেঙ্গু জ্বরের টেস্ট ফ্রি ঘোষণার পর জ্বরে আক্রান্ত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে হাসপাতালে। আমাদের স্বল্প জনবলে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা মেশিনের যে ধারণ ক্ষমতা বা সক্ষমতা তাও কখনও কখনও অতিরিক্ত চাপে আউট অব অর্ডার হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে প্রতিদিনের রিপোর্ট প্রতিদিন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এটা শুধু আমাদের এই হাসপাতালেই নয় প্রায় সব হাসপাতালের চিত্র প্রায় একই। আজকে আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবর চিঠি লিখছি। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে যেন অতিরিক্ত জনবলের দ্রুত ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আমরা অত্যন্ত সচেতন থাকলেও পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা পুরুষ মহিলা ও শিশুদের জন্য আলাদা ডেঙ্গু কর্ণার খুলেছি। কিন্তু এরপরও উপচে পড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এমন পরিস্থিতিতে আলাদা ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ওয়ার্ড করা কঠিন। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা শুধুমাত্র ডেঙ্গুরোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করবো।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৮৩৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২ জন। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছে ৫৭০ জন। বর্তমানে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী রয়েছে ২৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১০৬ জন, নারী ৭৪ জন। আর শিশু রয়েছে ৮৬ জন। গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৬১ জন।
জেইউ/এমএসএইচ/জেআইএম