নিজেকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে সিনেমায় পা রাখেন জায়েদ খান। নানামুখী চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে। নায়ক জায়েদ খান হিসেবে দর্শকের কাছে পরিচিত তিনি।
Advertisement
তবে গেল তিন বছরে চলচ্চিত্র শিল্পীদের নেতা হিসেবেই তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়র শিল্পীদের কাছে প্রিয় নাম জায়েদ খান। নায়ক জায়েদের চেয়ে শিল্পীদের নেতা জায়েদই অনেক এগিয়ে, অনেক প্রশংসিত।
সিনেমার সুদিন তো হারিয়েছে অনেক আগেই। সিনেমার কারখানা এফডিসিও ছিলো প্রাণহীন। সেখানে শিল্পীদের যাতায়াত প্রায় ছিলোই না বলা যায়। যাদের শুটিং থাকতো আসতেন, কাজ শেষ করে চলে যেতেন। অনেকে আফসোস করতেন এফডিসির রুক্ষতায়, প্রাণ হীনতায়।
সেই আফসোস কাটাতেই যেন মাঠে নেমেছিলেন জায়েদ খান। অভিনেতা মিশা সওদাগরকে নিয়ে তিনি তৈরি করেন একটি টিম। সেখানে রিয়াজ, পূর্ণিমা, ফেরদৌস, পপি, সাইমন, মাহিদের মতো জনপ্রিয় মুখগুলোও যোগ দেয়। আর তাদের অভিভাবক হিসেবে মাথার উপর ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, ডিপজল, রুবেল, আনোয়ারা, সুচন্দা, কবরী, ববিতা, রোজিনা, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাসদের মতো নন্দিত জনেরা।
Advertisement
জায়েদ সবাইকে একটি সূতায় বাঁধার চেষ্টা করেছেন। নানা অভিমান বুকে নিয়ে আড়ালে চলে যাওয়া অনেক শিল্পীদের তিনি ফিরিয়ে আনলেন। প্রিয় আঙ্গিনাতে বাড়লো শিল্পীদের আনাগোনা। এফডিসি আবারও রঙিন হয়ে উঠলো তারা-নক্ষত্রদের আলোয়।
২০১৭ সালের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন শেষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দায়িত্ব নেয় মিশা-জায়েদ প্যানেল। তারপর সমিতির গল্পটা বেশিরভাগই সাফল্যের।
নানা প্রজন্মের শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজকদের সঙ্গে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে শিল্পী সমিতি। বদলেছে সমিতির বাহ্যিক পরিবেশও। সেখানে এখন ফুল ফুটে, নাগরিক সোডিয়াম আলোর সঙ্গে খেলা করে চাঁদ জোছনাও।
কারো মৃত্যুতে যেমন শোক নামে তেমনি উৎসবের আল্পনাতে রঙিনও হয় সমিতির আঙ্গিনা। নায়ক-নায়িকাদের কোলাহলে মুখরিত থাকে দিনরাত।
Advertisement
সমিতিতে এখন মিলাদ হয় প্রয়াত শিল্পী-গুণী মানুষদের স্মরণে। শিল্পীরাও নিজেদের সুখ-দুঃখের অনুভূতি জানাতে পারেন সহকর্মীদের। করতে পারছেন নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ, বঞ্চিতরা পাচ্ছেন নানা সুবিধা। ব্যবস্থা হয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসারও। সবকিছুর পেছনেই রয়েছে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের ভাবনা ও পরিশ্রম।
সিনেমার অভাবে ধুঁকছে ইন্ডাস্ট্রি। চারদিকেই মন খারাপি। তার ভেতর নানা কার্যক্রম, যৌথ প্রযোজনাসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কর্মকান্ডে শিল্পী সমিতিকে চাঙ্গা রেখে চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে বছরজুড়েই আলোচনায় থাকছেন জায়েদ খান। হয়ে উঠেছেন চলচ্চিত্রের মানুষদের প্রিয় মানুষ, ভরসা করার মতো নেতা।
তারই প্রমাণ মিলছে আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জন্মদিনে সহকর্মীদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। পরিচালক, প্রযোজকসহ চলচ্চিত্রের নানা আঙিনার মানুষেরা জায়েদকে শুভকামনা জানাচ্ছেন জন্মদিন উপলক্ষে।
এ নিয়ে উচ্ছ্বসিত জায়েদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানুষের জীবন অনেক ছোট। সেই জীবনটাকে ভালোবাসার মাধ্যমে অনেক বড় করে ফেলা যায়। ভালোবাসা দিতে পারলে ভালোবাসার অভাব হয় না। আমি এটা বিশ্বাস করি। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ যারা আমাকে ভালোবাসায় আবদ্ধ করে নিয়েছেন।
প্রতিবার জন্মদিন এলে ঠের পাই জীবনে কিছুটা হলেও ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছি। আমি চিরদিন সুখে-দুঃখে চলচ্চিত্রের পাশে থাকতে চাই, চলচ্চিত্রের মানুষদের সঙ্গে থাকতে চাই।’
জায়েদ খানের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে ‘ভালবাসা ভালবাসা’ ছবি দিয়ে। রোম্যান্টিক ধাঁচের এই ছবিটির পরিচালনা করেন মহম্মদ হাননান। এতে আরও অভিনয় করেন রিয়াজ এবং শাবনূর।
পরের বছর তিনি মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘কাজের মানুষ’ এবং মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘মন ছুঁয়েছে মন’ ছবিতে অভিনয় করেন। ২০১০ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত এফ আই মানিক পরিচালিত ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’ এবং মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ‘মায়ের চোখ’ ও ‘রিকসাওয়ালার ছেলে’ ছবি।
২০১২ সালে জায়েদ খানকে শাবনূরের বিপরীতে প্রধান অভিনেতা হিসেবে ‘আত্মগোপন’ ছবিতে দেখা যায়। ছবিটি পরিচালনা করেন এম এম সরকার। ২০১৪ সালে তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো হল মাশরুর পারভেজ ও আকিব পারভেজের যৌথ পরিচালনার ‘অদৃশ্য শত্রু’, রকিবুল আলম রকিবের ‘প্রেম করবো তোমার সাথে’, আজাদ খানের ‘দাবাং’, মনতাজুর রহমান আকবরের ‘মাই নেম ইজ সিমি’ এবং রাজু চৌধুরীর ‘তোকে ভালোবাসতেই হবে’।
২০১৫ সালে তিনি শাহ্ আলম মন্ডল পরিচালিত ‘ভালোবাসা সীমাহীন’, রকিবুল আলম রকিব পরিচালিত ‘নগর মাস্তান’ ছবিতে অভিনয় করেন জায়েদ।
২০১৭ সালে প্রযোজনায় নাম লেখান জায়েদ খান। তার প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘অন্তর জ্বালা’ পরিচালনা করেন মালেক আফসারী। এখানে তার নায়িকা ছিলেন পরীমনি। বর্তমানে কিছু ছবি তার নির্মাণাধীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গেল ২৫ মে শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরই শুরু হবে সমিতির জন্য নতুন মেয়াদে নেতৃত্ব বাছাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
এলএ/এমকেএইচ