দেশজুড়ে

ফেরিতে তিতাসের মৃত্যু : জেলা প্রশাসনের তদন্ত শুরু

যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল হক পাটোয়ারীর নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির সদস্যরা কাঁঠালবাড়ী ঘাটে এসে তাদের কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় তারা ঘটনার সময় ঘাট এলাকায় কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলেন।

Advertisement

তদন্ত কমিটির প্রধান মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহিদুল হক পাটোয়ারী বলেন, তদন্তের শুরুতেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ওই রাতে ঘাটে কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলছি। সাত কার্যদিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুরের জন্য ফেরি ছাড়তে দেরি হওয়ার কারণে অ্যাম্বুলেন্স স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় সোমবার তিনটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল হক পাটোয়ারীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, এএসপি (সার্কেল) আবির হোসেন ও বিআইডব্লিউটিসির এজিএম (মেরিন) একেএম শাজাহান। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

Advertisement

নিহত তিতাস ঘোষ (১২) নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল তিতাস।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি ঘাটে থাকায় অ্যাম্বুলেন্সে তিতাসের মৃত্যু হয়। ওই দিন আশপাশের লোকজনের অনুরোধের পরও কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ফেরি ছাড়া হয়নি। অথচ রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ী ১নং ফেরিঘাটে পৌঁছায় অ্যাম্বুলেন্সটি। তখন কুমিল্লা নামের ফেরিটি ঘাটেই ছিল। কিন্তু ওই কর্মকর্তার গাড়ি না আসা পর্যন্ত ফেরি ছাড়তে রাজি হয়নি ঘাট কর্তৃপক্ষ। কারণ ওই কর্মকর্তার ভিআইপি গাড়ি যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক।

এ অবস্থায় রোগীর স্বজনরা ফোন করেন জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে। সাহায্য চান ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। কিন্তু কারও কোনো অনুরোধই রাখেনি ঘাট কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১১টার দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্টিকার লাগানো সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি ঘাটে আসার পর রাত ১১টার দিকে ফেরি ছাড়া হয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয় স্কুলছাত্র তিতাসের।

তিতাসের স্বজনদের অভিযোগ, ভিআইপি আসার অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ঘাটেই বসেছিল ফেরিটি। আশপাশের লোকজনের অনুরোধের পরও কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ফেরি ছাড়েনি। এই মৃত্যুর জন্য ওই ভিআইপি ও বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা দায়ী। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

Advertisement

এ কে এম নাসিরুল হক/আরএআর/এমকেএইচ