‘বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে চাই’- এশিয়ার ফুটবলের শীর্ষ দেশ ইরানের এমন আগ্রহ প্রত্যাশারও বাইরে। বাংলাদেশের জন্য ‘মেঘ নাই চাইতেই বৃষ্টি’র মতোই। ইরান ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিল কাতারে। যেখানে বিশ্বকাপের আগে ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ। আবার কাতারেই হতে পারে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বের প্রথম ম্যাচটি। দুই দেশের ফুটবল ফেডারেশনের মধ্যে আলোচনার গড়িয়েছিল অনেকদূর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে হবে, ঠিক তখনই ইরানকে ‘না’ করে দিল বাংলাদেশ।
Advertisement
এশিয়ার এক নম্বর দল ইরান। ফিফা র্যাংকিংয়ে ২৩। এমন একটি দেশের বিরুদ্ধে মাথা কুটলেও তো প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ কম মিলবে প্রায় ২০০ ছুঁইছুঁই কোনো দেশের। অথচ বাংলাদেশ’ই কি না ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের প্রস্তাব।
বাংলাদেশ খেলবে না- এমন সিদ্ধান্তের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন সুযোগও হাত ছাড়ে করে কেউ? বাফুফে থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে- তাদের ম্যাচ খেলার ইচ্ছে থাকলেও সময়টা যুতসই ছিল না। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচ খেলবে ১০ সেপ্টেম্বর। ইরান ম্যাচটি খেলতে চেয়েছিল ৫ সেপ্টেম্বর। বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের ঠিক ৫ দিন আগে ম্যাচটি নাকি খেলতে চাননি বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে। ২ বা ৩ তারিখ হলে হয়তো সম্ভব ছিল।
তবে বাংলাদেশ কেন ম্যাচটি খেলতে চাচ্ছে না, তার রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। আসলে বাংলাদেশ এমন একটি দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু করতে চাচ্ছিল না, যে দলের বিরুদ্ধে ম্যাচের পর জামাল ভুঁইয়াদের মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে। চিড় ধরতে পারে আত্মবিশ্বাসে।
Advertisement
ইরান খেলতে চায় বাংলাদেশের সঙ্গে- এটাকে প্রথমে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ জেমি ডে। সময়টা না মেলায় তিনি ‘না’ করে দিতে বলেন বাফুফেকে।
ম্যাচটি না খেলার সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল কিনা জানতে চাইলে জেমি ডে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচের অল্প কয়েকদিন আগে ম্যাচটি খেলতে হতো। ইরানের ফিফা র্যাংকিং ২৩। তাদের কাছে আমরা সহজ প্রতিপক্ষ। ম্যাচের ফল আমাদের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারতো। তাই আমি মনে করি, আমাদের এটা ভালো সিদ্ধান্ত।’
এখন কি বাংলাদেশ কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বিশ্বকাপ মিশনে নামতে পারবে? ‘সেটা নির্ভর করছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা আমরা কোথায় করবো তার ওপর। প্রস্তুতি দেশে হলে এক রকম, বাইরে হলে আরেক রকম পরিকল্পনা’- বলেছেন জেমি ডে।
বাফুফে বলছে ম্যাচের অনন্ত ১০ দিন আগে দলকে কাতারে রেখে অনুশীলন করাবে। তাহলে তো সেখানে কোনো ক্লাব দলের বিরুদ্ধেও খেলার সুযোগ থাকবে তাই না? ‘হ্যাঁ। আমরা সেটাও দেখছি। যদি সম্ভব হয়। এর আগেও কাতারে ক্যাম্প করে এবং ক্লাব দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে সুফল পেয়েছিল বাংলাদেশ।’
Advertisement
গত মার্চে বাহরাইনে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বের আগে বাংলাদেশের যুবারা কাতারে ১০ দিন কন্ডিশনিং ক্যাম্প করার পাশাপাশি স্টার লিগের দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। জেমি যে সে প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘কাতারের কোনো ক্লাব দলের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলেও ভালো হবে। আগেও আমরা করেছি। ভালো হয়েছিল।’
জেমি ডে আসলে বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগে খেলোয়াড়দের মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে চান। যেমন করেছিলেন এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বের আগে। ‘আশা করি, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে ছেলেদের মনোবল বাড়িয়ে নিতে পারবো’- বলেছেন জেমি ডে।
জেমি ডে এখন ছুটি কাটাচ্ছেন ইংল্যান্ডে। কবে ফিরবেন জানতে চাইলে জেমি বলেন, ‘ক্যাম্প শুরুর আগেই চলে আসবো।’ আর কোচের ছুটিয়ে কাটিয়ে ফেরা প্রসঙ্গে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেছেন,‘আমরা আগস্টের চতুর্থ সপ্তাহের শুরুর দিকেই ক্যাম্প শুরু করে দেবো। কিছুদিন ক্যাম্প করার পর দলকে ১০ দিনের জন্য কাতার পাঠানোর পরিকল্পনা আছে। কোচ ফিরতে পারেন আগস্টের ২০ বা ২১ তারিখ।’
আরআই/আইএইচএস/এমকেএইচ