যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় স্কুলছাত্র তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যুগ্ম সচিব ও ফেরির ম্যানেজারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে।
Advertisement
একই সঙ্গে রিটে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠন, তিতাসের পরিবারকে তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ফেরি ঘাটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্স চলাচল নিশ্চিত করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটসের চেয়ারম্যানের পক্ষে জনস্বার্থে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী জহির উদ্দিন লিমন এ রিট করেন। রিটে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল, মাদারীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপার, কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসাইন মিয়া ও কাঁঠালবাড়ি থানার ওসিকে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আগামীকাল বুধবার (৩১ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।
Advertisement
গত ২৫ জুলাই রাতে সরকারের এটুআই প্রকল্পের যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি বসে থাকায় ঘাটে আটকে পড়া অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার চারদিন পর বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিতাসের মৃত্যু নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জহিরুদ্দিন লিমন জানান, অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষ। এছাড়া যে কোনো মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরি পারাপার নির্বিঘ্ন করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে।
আইনজীবী লিমন আরও জানান, মানবতা আজ আমাদের কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? একজন অসুস্থ শিক্ষার্থীকে যখন ঢাকায় নিয়ে আসছিল তখন ভিআইপি অজুহাতে তাকে ফেরিতে উঠতেই দেয়া হয়নি। পরে ওই শিক্ষার্থী মারা যায়। যে খবরটি সারাদেশের মানুষ দেখেছে। ওই খবরটি নিয়ে গতকালই আমি আদালতে গিয়েছিলাম। আদালত বলেছেন, লিখিত পিটিশন নিয়ে যেতে। আজ আমি পিটিশন নিয়ে আদালতে গিয়েছি। আদালত আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি রিট দায়ের করেছি।
দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে (১১) নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে ফেরিতে ওঠে। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পে দায়িত্বরত সবুর মণ্ডলের গাড়ির জন্য তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১১টার দিকে ফেরিটি শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা দেয়। তার আগেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যায় তিতাস।
Advertisement
তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তাদের অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি সরকারি জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করা হলেও ফেরি দ্রুত ছাড়তে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
ওই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম। এছাড়া তিতাসের মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ও তদন্তে কমিটি করেছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব শাহনওয়াজ দিলরুবা খানের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শাহ হাবিবুর রহমান হাকিম। তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সোমবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এফএইচ/এএইচ /এমএআর/এমকেএইচ/জেআইএম