আফিনা তাসনিম। বয়স সবে মাত্র পাঁচ বছর পার হয়েছে। এ বয়সেই ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সইতে হয়েছে তাকে। গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় তার শরীরে জ্বর আসে। এরপর তিনদিন তাকে জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু জ্বর না কমায় গত ২৪ জুলাই (বুধবার) তাকে রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন >> ডেঙ্গুর নতুন রেকর্ড, ঘণ্টায় ৪৬ রোগী হাসপাতালে
সেখানে চিকিৎসকরা কয়েকটি পরীক্ষার পর নিশ্চিত হন যে, আফিনা তাসনিম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা শুরু করা হয়। টানা ছয়দিন বীভৎস যন্ত্রণা শেষে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আজ সোমবার (২৯ জুলাই) তাকে রিলিজ দেয়।
এদিন দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে আফিনা তাসনিমের কাছে জ্বরের বিষয়ে জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে সে বলে, জ্বরে খুব কষ্ট হয়েছে। তবে আজ বাড়ি যাওয়ার অনুমতি পেয়ে খুব ভালো লাগছে। শরীরে আর ব্যথা নেই।
Advertisement
তাসনিমের বাবা নুরুল আমবিয়া জাগো নিউজকে জানান, বড় মগবাজারের বাসিন্দা তারা। গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় তাসনিমের জ্বর এলে স্থানীয় চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তিনদিন পার হয়ে গেলেও কোনো রেজাল্ট না পেয়ে তাসনিমকে তারা হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে, তাসনিম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
চিকিৎসকের পরামর্শে গত ২৪ জুলাই থেকে সেখানে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। অবশেষে আজ সোমবার কিছুটা সুস্থ হলে চিকিৎসক তাকে রিলিজ দেন। তবে সাতদিন পর আবারও কিছু টেস্ট করতে বলা হয়েছে। এসব টেস্টে খারাপ কিছু ধরা না পড়লে সম্পূর্ণ সুস্থ হবে তাসনিম।
আরও পড়ুন >> ৯ মাসেও নষ্ট হয় না এডিস মশার ডিম
তাসনিমের পাশের বেডেই ফাল্গুনী নামের এক বছর চার মাসের এক ফুটফুটে শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। ফাল্গুনীর বাবা শ্যামল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, তাদের বাসা মতিঝিলের হিন্দু পাড়ায়। গত শনিবার সে জ্বরে আক্রান্ত হয়। গতকাল রোববার তাকে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত সে। তবে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকরা আশা করছেন, শিগগিরই ফাল্গুনী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে।
Advertisement
হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালের ২১২টি বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ছোট-বড় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। তারা আরও জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ হাসপাতালে কোনো মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়নি। গত ১ মে হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। গত সোমবার দুপুর (২৯ জুলাই) পর্যন্ত মোট ৮০৬ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এখানে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত এ হাসপাতালে ২১২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৯৭ এবং বয়স্ক ১১৫ জন।
আরও পড়ুন >> ৫০০ টাকার ডেঙ্গু টেস্ট ১২০০, পপুলারকে জরিমানা
হাসপাতালটির সহকারী মেট্রন রিটা জাগো নিউজকে বলেন, এ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ৪৬টি বেড রয়েছে। কিন্তু রোগী বেশি হওয়ায় ওয়ার্ডে অতিরিক্ত বেড রেখে ৫২ থেকে ৫৪ জনকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
পারতপক্ষে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে তারা ফেরত দিচ্ছেন না। তারপরও মাঝে মাঝে ফেরত দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এমইউএইচ/এমএআর/এমএস