পঞ্চগড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফুল বাগানের দেয়াল ধসে নীলা আক্তার নামে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের ১নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
Advertisement
মৃত নীলা পাশের মিলগেট এলাকার আনোয়ার হোসেন লিটনের বড় মেয়ে। নীলার বাবা লিটন পঞ্চগড় চিনিকলের কর্মচারী। এ মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
স্কুলের শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী অভিভাবকরা জানান, স্কুল চলাকালীন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নীলাসহ কয়েক শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের বারান্দা সংলগ্ন ফুল বাগানের দেয়ালের পাশে খেলছিল।
এ সময় আরও দুই শিক্ষার্থী ওই দেয়াল লাগোয়া গেটে ঝুলছিল। একপর্যায়ে দেয়ালটি নীলার ওপর ধসে পড়ে। ভয়ে সহপাঠী শিক্ষার্থীরা পালিয়ে যায়। অভিভাবকরা দেখতে পেয়ে দ্রুত নীলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বিক্ষোভ করলে অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন শিক্ষকরা। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
Advertisement
ঘটনার পর পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান, জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন এবং পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মান্নানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুল চলাকালীন ক্লাসে না গিয়ে শিক্ষকরা অফিসকক্ষে বসে গল্প করছিলেন। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুপুর ১২টার মধ্যে ছুটি হওয়ার কথা থাকলেও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় সাড়ে ১১টার দিকে শিশুরা বের হয়ে খেলা করছিল। দেয়াল ধসে শিশু চাপা পড়লেও কোনো শিক্ষক উদ্ধার করতে বের হননি।
দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রুবিনা আক্তার বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নীলাসহ শিশুরা বের হয়ে দেয়ালের পাশে খেলা করছিল। দেয়ালের গেটে আরও দুই শিশু দোল খাচ্ছিল। এ সময় দেয়ালটি ধসে নীলার ওপর চাপা পড়ে। মেয়েটির চিৎকার শুনেও কোনো শিক্ষক বের হননি। স্কুলের আয়াসহ আমরা তাকে উদ্ধার করি। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়।
পঞ্চগড় ১নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম মুনির বলেন, আমি ১ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। দেয়ালটি যে নড়বড়ে ছিল, সেটি বোঝা যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি এবং সমাবেশের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এই সময়ের মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। শিক্ষকরাই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
Advertisement
সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহারিয়ার কবীর শিমুল বলেন, দুপুর ১২টা ২ মিনিটে শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়। ১২টা ২০ মিনিটে ইসিজির মাধ্যমে আমরা মৃত্যু নিশ্চিত করি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, শিশুটির ওপর দেয়াল চাপা পড়েছে এবং মাথায় আঘাত লেগেছিল।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ঘটনার পরপর স্কুল এবং হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। আমরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। স্কুলের একটি দেয়াল ধসে শিশুটি চাপা পড়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিশুটির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মান্নানকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিশুটির দাফনের জন্য তার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শফিকুল ইসলাম/এফএ/এএম/এমকেএইচ/এমএস