কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকায় প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে পাঁচ একর জায়গা নিয়ে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপিত হচ্ছে। কক্সবাজার ক্যাম্পাসটি হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোস্টাল বায়ো ডাইভারসিটি অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ ইনস্টিটিউট’। ইতোমধ্যে এই ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।শনিবার জেলা রাজস্ব বিভাগের একটি দল এটির দখলও বুঝিয়ে দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এই ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই ক্যাম্পাসটি হবে দেশের কোনো সরকারির স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আউটরিচ ক্যাম্পাস। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উম্মোচন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।জানা যায়, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য সরকার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকায় ঝিলংজা মৌজার ২৫০০১ নং দাগের খাস খতিয়ানভূক্ত পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এর মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে দুই কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ২৬২ টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য হওয়ায় জমির মূল্য শতকরা ১০ ভাগ কম ধরা হয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ অনুষদের ডিন ও কক্সবাজারের সন্তান প্রফেসর ড. নুরুল আবছার খান জানান, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষাকে একেবারে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। বিশেষ করে চট্টগ্রামে মাত্র সাত একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি সংকটের কারণে অনেক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা সম্ভব নয়। ফলে মূল ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।এ বিষয়ে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইনও সংশোধন করা হয়েছে এবং প্রথম ক্যাম্পাসটি কক্সবাজারে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জমি বরাদ্দের পর শনিবার জমির দখলও বুঝিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে পিলার-খুঁটির সাহায্যে ক্যাম্পাসের জন্য নির্ধারিত স্থানটিতে ঘেরবেড়া দেয়া হচ্ছে।কক্সবাজারে ক্যাম্পাস স্থাপনের যুক্তি তুলে ধরে তিনি আরো জানান, কোস্টাল বায়ো ডাইভারসিটি ও ফিশারিজ বিষয়ে কক্সবাজার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের মাছ নিয়ে সঠিক গবেষণা করা যাবে এবং শিক্ষার্থীরা বাস্তবসম্মত শিক্ষা অর্জন করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের সঠিক গবেষণা ও বাস্তবসম্মত শিক্ষার জন্য মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে এই ক্যাম্পাসে প্রতি সেশনে ৭০ জন করে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে এবং আরো নতুন নতুন বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।সূত্র জানায়, জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কী কী ধরনের প্রভাব পড়ছে তা এই ক্যাম্পাসে গবেষণার ফলে জানা যাবে। বিশেষ করে সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর এ নিয়ে তেমন গবেষণা না হওয়ায় এ ক্যাম্পাসে এবিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।পাশাপাশি এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও প্রতিষ্ঠানটি ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এই ক্যাম্পাসের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ হলে আশেপাশের বাসিন্দারাও উপকৃত হবে এবং এলাকার উন্নয়ন হবে।এলাকাবাসীও এ ক্যাম্পাসটিকে স্বাগত জানিয়েছে বলে জানান দরিয়ানগর বড়ছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমিহীন সমবায় সমিতির সভাপতি মাহবুব আলম ও আহমদ গিয়াস।সায়ীদ আলমগীর/বিএ
Advertisement