আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় ফেনীর জেল সুপার রফিকুল কাদেরসহ সাতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
Advertisement
রোববার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে জেল সুপার ছাড়াও ডেপুটি জেলার মনির হোসেন, কারারক্ষী মো. শাহনেওয়াজ, মো. রিপন, ছবি রঞ্জন ত্রিপুরা, স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী মো. গোলাম মাওলা ও মোশারেফ হোসেনের সাক্ষ্য নেয়া হয়।
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত বাদীসহ ৫৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার ফেনীর জেল সুপার রফিকুল কাদের ও ডেপুটি জেলার মনির হোসেনসহ সাতজন আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন।
তিনি আরও জানান, আগামীকাল সোমবার (২৯ জুলাই) নুসরাতের বাবা এ কে এম মুসা মানিক এবং অন্য দুই সাক্ষী মোহাম্মদ আলী ও সৈয়দ সেলিমের সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
Advertisement
ডেপুটি জেল সুপার আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে আমি ফেনী কারাগারের ডেপুটি জেল সুপার হিসেবে কর্মরত। কারাগারের সাক্ষাৎ কক্ষের রেজিস্টারটি আমি রক্ষণাবেক্ষণ করি। গত ১৬ মে দুপুরে পিবিআই কর্মকর্তারা কারাগারে এসে ওই রেজিস্টারটি জব্দ করেন। যেখানে সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের মামলায় আটক ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের তথ্য লিপিবদ্ধ ছিল। এ রেজিস্টার কারাগারে প্রতিদিনের সাক্ষাৎকারীদের তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হয় বলে আমার কাছে জিম্মায় রাখি।’
স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা ও মোশাররফ হোসেন আদালতে বলেন, ‘গত ৮ মে পিবিআই কর্মকর্তারা নুসরাত হত্যা মামলার আসামি শামীম, যোবায়ের ও জাবেদকে নিয়ে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের দ্বিতীয় তলার অধ্যক্ষের রুমের সামনে যায়। সেখানে একটি ওয়াল ক্যাবিনেট থেকে একটি কাচের গ্লাস জব্দ করা হয়। জব্দ তালিকায় আমরা স্বাক্ষর করি। ওই সময়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাবেদ জানায়, ওই গ্লাসে কেরোসিন ভরে নুসরাতের গায়ে ঢেলে আগুন লাগানো হয়।’
কারারক্ষী মো. শাহনেওয়াজ, মো. রিপন ও ছবি রঞ্জন ত্রিপুরা তাদের জবানিতে বলেন, ‘আমরা পালা করে ফেনী কারাগারে দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ তালিকা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করি ও শ্লিপ লিখি। গত ১ এপ্রিল দুপুরে সিরাজ উদ দৌলার বোন বিবি জহুরা অধ্যক্ষ সিরাজের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তার সঙ্গে আসামি নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, ইমরান হোসেন মামুন, হাফেজ আব্দুল কাদের ছিলেন বলে রেজিস্টারে উল্লেখ আছে। ৩ এপ্রিল দুপুরে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন সিরাজের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তার সঙ্গে শাহাদাত হোসেন শামীম, ইফতেখার উদ্দিন রানা, জাবেদ হোসেনও সিরাজের সঙ্গে দেখা করেন। এসময় তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন।’
২৭ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সিরাজের সহযোগীরা দফায় দফায় তার সঙ্গে দেখা করেন বলে কারারক্ষীদের বক্তব্যে উঠে আসে।
Advertisement
রোববার বেলা ১১টা থেকে মাঝে ৩০ মিনিটের বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম চলে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরা করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
রাশেদুল হাসান/এমবিআর/পিআর