এমন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের নয়। স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে বাংলাদেশের এমন চিত্র কোনোভাবেই মানতে পারছি না। নৃশংসভাবে মানুষকে পিটিয়ে মারছে। অরাজক সমাজকেও হার মানাচ্ছে পিটিয়ে মারার ঘটনা।
Advertisement
বলছিলেন লেখক, গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। গুজব ও গণপিটুনিতে মানুষ মারার প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এ সমাজ বিশ্লেষক।
আনিসুজ্জামান বলেন, নৃশংসতার ভয়াবহতায় চমকে উঠছি। নিছক গুজবের জেরে মানুষকে মরতে হচ্ছে। এমন ঘটনা আগে হয়েছে। কিন্তু একুশ শতকে ছেলেধরা গুজব মানব কেন? অথচ প্রতিনিয়ত গুজবে দেশে কেঁপে উঠছে!
সাম্প্রতিক সময়ের সহিংসতাগুলো দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, চরম ভয় হচ্ছে সমাজ নিয়ে। আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পেছনের ডাক শুনতে পাচ্ছি। অশনিসংকেত মিলছে। নিরীহ এক নারীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারা হলো অথচ কেউ ওই নারীকে বাঁচাতে এগিয়ে এলো না। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হলো। এই নির্মমতা কোনোভাবেই সহ্য করার মতো নয়।
Advertisement
মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকেই মানুষ এমন সহিংস হয়ে উঠছে- উল্লেখ করে এ গবেষক বলেন, রাষ্ট্র, সমাজের কোথাও গলদ আছে। নইলে স্বাধীনতার এত বছর পর এমন অস্থিরতা দেখব কেন?
মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে পরিবারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। আমার কাছে মনে হচ্ছে, পারিবারিক গাঁথুনিতে চরম শৈথল্য দেখা দিয়েছে। পরিবার থেকে যে শিক্ষা নেয়ার কথা, সে শিক্ষা সন্তানরা নিতে পারছে না। অভিভাবকদের মধ্যকার উদাসীনতাই এর প্রধানতম কারণ- যোগ করেন আনিসুজ্জামান।
সম্প্রতি ‘ছেলেধরা’ ও ‘পদ্মা সেতুতে মাথা প্রয়োজন’- এমন গুজবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষ গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা পড়ছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত ২০ জুলাই সকালে উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেনুকে (৪০) পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ঘটনার দিন তাসলিমা তার সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে স্কুলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি অভিভাবক রিয়া বেগমকে ভর্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। একপর্যায়ে তিনি রেনুর বাসার ঠিকানা জানতে চান। এতে রিয়া বেগমের সন্দেহ হয়। তিনি তাসলিমাকে ‘ছেলেধরা’ বলে চিৎকার শুরু করেন। চিৎকার শুনে অতি উৎসাহী জনতা তাসলিমাকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
Advertisement
এএসএস/এমএআর/জেআইএম