দেশজুড়ে

একই বিছানায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে অন্য রোগী, নেই মশারিও

ছোট্ট একটি ওয়ার্ডে অন্তত ২৫ জন সাধারণ রোগী। তাদের সঙ্গে একই ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ১৭ জনকেও। একই বেডে অন্য রোগীর সঙ্গে রাখা হচ্ছে তাদের। নেই কোনো মশারি।

Advertisement

হাসপাতালে ঠিক কতোজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে- তা জানা নেই হাসপাতালের উপ-পরিচালকের। তাকে একাধিকবার ফোন করেও মেলেনি কোনো তথ্য। সন্ধ্যার পর হাসপাতালে গিয়ে ফোন করলে জানান, ‘অফিস ছাড়া কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন না!’ এটি কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু স্বাস্থ্য সেবার নমুনা। এ অবস্থায় জেলায় ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অপরদিকে শনিবারের আগে জেলার সিভিল সার্জন জানতেনই না যে কিশোরগঞ্জে কোনো ডেঙ্গু রোগী আছে! ওইদিন পর্যন্ত ‘জেলায় কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নেই’ বলে প্রতিদিন ঢাকায় রিপোর্ট পাঠিয়েছেন।

অথচ জুলাই মাসের প্রথম থেকে গতকাল পর্যন্ত শুধুমাত্র জেলা হাসপাতালেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এখনও ভর্তি আছেন ১৭ জন। জানা গেছে গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে সিভিল সার্জনের কাছে ডেঙ্গু বিষয়ে কোনো তথ্যই জানানো হয়নি।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জে এ পর্যন্ত মোট ৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। জেলা সদরসহ দুটি হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছেন কমপক্ষে ৬০ জন। হাসপাতালে এখনও ভর্তি আছেন ৩০ জন। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

এদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মশারি ছাড়াই একই বিছানায় অন্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার সিভিল সার্জন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা সদরের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের চিত্র এটি। এখানে অন্য রোগীর সঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তদের। ফলে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম।

বেশিরভাগ রোগী জানিয়েছেন তারা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ব্যাপারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেয়ায় এ জ্বর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

হাসপাতালের এমন পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্তরা। অনেকে সেখানে ভর্তি হয়েও প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে চলে যাচ্ছেন বাড়িতে।

শনিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে ডেঙ্গু রোগীর বিষয়ে তথ্য চান এ প্রতিবেদক। কিন্তু হাসপাতলের উপ-পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া তার কাছে সঠিক তথ্য নেই জানিয়ে একজন ব্রাদারের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

সন্ধ্যার পর একটি ওয়ার্ডে গিয়ে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। যাদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই একজন করে অন্য রোগী। কারোরই মশারি নেই। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপ-পরিচালক ডা. রাজিয়া সুলতানাকে ফোন দেয়া হলে তিনি জানান ‘অফিস ছাড়া আমি কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলি না‘ ডেঙ্গু রোগীর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ- বলার পর তিনি আজ (রোববার) তার অফিসে আসতে বলেন।

পরে রাতেই হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. রমজান মাহমুদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘জুলাইয়ের প্রথম থেকে শনিবার পর্যন্ত হাসপাতলে ভর্তি আছেন ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী। চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ৩২ জন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ‘স্থান সংকুলান না হওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের সাধারণ ওয়ার্ডে অন্য রোগীর সঙ্গে রাখা হচ্ছে। অচিরেই ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার পর্যন্ত কিশোরগঞ্জে আধুনিক সদর হাসপাতালে ১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন। চিকিৎসা নিয়েছেন আরও ২৭ জন। এছাড়া জেলার বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে ভর্তি আছেন আরও ১৩ জন। মশারি ছাড়া অন্য রোগীর সঙ্গে একই বিছানায় ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আমাকে কোনো ডেঙ্গু রোগীর তথ্য জানানো হয়নি। তাই এ পর্যন্ত প্রতিদিন ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা শূন্য বলে ঢাকায় রিপোর্ট পাঠাচ্ছিলাম।’

নূর মোহাম্মদ/এমএমজেড/এমএস