দেশজুড়ে

পেখম মেলে সঙ্গীকে ডাকছে ময়ূর

ময়ূরকে বলা হয় বর্ষার রাণী। এখন বর্ষাকাল, ময়ূরের প্রজনন সময়। আর এ সময় স্ত্রী ময়ূরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নয়নাভিরাম পেখম মেলে ধরে পুরুষ ময়ূর। এতে বিশেষ দুর্বলতা তৈরি হয় এবং তখনই আকর্ষণীয় নৃত্য প্রদর্শণকারী ময়ূরকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় স্ত্রী ময়ূর।

Advertisement

ময়ূরের ভালোবাসার আবহ তৈরির এ চক্র বর্ষার শুরু থেকেই দেখার সুযোগ করে দিয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক।

দেশের অন্যান্য স্থানে হাতেগোনা কয়েকটি ময়ূর থাকলেও সাফারি পার্কে ময়ূরের জীবন চক্র পরিচালিত হয় উন্মুক্ত অবস্থায়। পার্কের সব জায়গায় ময়ূরের অবাধ বিচরণ থাকায় দর্শনার্থীরাও পেয়ে থাকেন বিনোদন।

ময়ূর ফ্যাজিয়ানিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অত্যন্ত সুন্দর একটি পাখি। এশিয়ায় নীল ও সবুজ মোট দুই প্রজাতির ময়ূরের দেখা মেলে। তবে মাঝে মধ্যে জিনগত কারণে সাদা ময়ূরের দেখা পাওয়া যায়। নীল ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি।

Advertisement

ময়ূর সর্বভুক পাখি। এরা মুরগির মতো ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। ময়ূর বন্য পাখি। এরা মাটির গর্তে বাস করে ও গাছে বিশ্রাম নেয়। শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য পায়ের নখ ব্যবহার করে তারা। দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বত্রই ময়ূরের দেখা মিললেও বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে ময়ূর।

সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, ময়ূরের প্রজননের সময় বর্ষাকাল। আর বর্ষাকালে ময়ূরীর সঙ্গে মিলনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণে পেখম মেলে ময়ূর। সে যখন তার শরীর দুলায় তখন রঙিন বর্ণের পালকগুলো শরীরের দু’পাশে ঝুলে থাকে। এর ফলে খাড়া হয়ে থাকা পালকগুলো মর্মর ধ্বনি করে। এছাড়া সে জোরে চিৎকার করে। চিৎকার তেমন সুরেলা নয় কিন্তু এটার মাধ্যমে ময়ূরীকে সে জানায় যে, তার প্রতি সে মিলনে আগ্রহী। ময়ূররা একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত ময়ূরীকে সঙ্গী হিসেবে রাখে। একটি ময়ূরী বছরে ২৫টির মতো ডিম দেয়।

তবে ময়ূর তার এই সুন্দর পেখম নিয়ে জন্মলাভ করে না। ৩ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ময়ূরের লেজ গজায় না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের স্ত্রী ও পুরুষ হিসেবে আলাদা করা যায় না। ময়ূর এবং ময়ূরী দেখতে একদম একই রকমের হয়ে থাকে। ৬ মাস বয়স থেকে ময়ূর রং বদলাতে শুরু করে। ময়ূর প্রতি বছর তাদের প্রজননের পর পেখম বদলায়। সে সময় পাখাগুলো দেহ থেকে ঝরে পড়ে। ময়ূরের গড় আয়ু ২০ বছর। বিশাল পেখম থাকা সত্ত্বেও ময়ূর উড়তে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, পার্কের প্রতিষ্ঠাকালে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ৩০টির মতো ময়ূর আনা হয়। এরপর থেকেই প্রতিনিয়ত ময়ূর থেকে বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এখান থেকে দেশের অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রেও ময়ূর দেয়া হয়েছে।

Advertisement

তিনি জানান, কয়েক বছর আগে সাফারি পার্কে ময়ূরের দ্রুত বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইনকিউবেটর স্থাপন করা হয়েছে। এখানে বর্তমানে ময়ূরগুলো উন্মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। ময়ূরের অবাধ বিচরণে দর্শনার্থীরাও বিনোদনে নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

এফএ/পিআর