দেশজুড়ে

টিউবওয়েল বসালেই উঠছে গ্যাস

টিউবওয়েল ও ডোবা থেকে গ্যাস উঠছে। সেই গ্যাস পুড়িয়ে আনন্দ করছে স্থানীয়রা। অনেকে আবার গ্যাস বের হওয়ার ভয়ে টিউবওয়েল ও মাটিতে বসানো পাইপ উঠিয়ে গর্ত ভরাট করে দিয়েছেন।

Advertisement

এমন ঘটনা ঘটছে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীর কারণে বিচ্ছিন্ন ৩ নং ওয়ার্ডের চর সুলতানী গ্রামে। সরকারিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সরকারিভাবে ওই গ্যাস উত্তোলনের দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন টিউবওয়েলে ঘর ঘর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বিষয়টি তারা গুরুত্ব দেননি। গত দেড় মাসে দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৩টি শ্যালো টিউবওয়েল জন্য লাইপ বসালে সেখান থেকে প্রবল বেগে পানি উঠতে থাকে এবং অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টি টিউবওয়েল বসানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে সন্দেহ হলে তারা পাইপের মুখে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তখন পাইপ থেকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। এ ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে পুরো গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে পরে। এরপর স্থানীয়রা লাইন দিতে থাকেন সেই দৃশ্য এক নজর দেখার জন্য। পরে শ্রমিকরা বিষয়টি ওই বাড়ির মালিককে জানান।

আজিজুল রহমান জমাদ্দার নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাড়ির পুকুরের পানি অনেক সময় শুকিয়ে যায়। তাই গোসল ও ধোয়ার কাজে পারিবারের লোকজনের অনেক কষ্ট হয়। এজন্য গত রোজার দু’দিন আগে একটি শ্যালো টিউবওয়েল বসানোর জন্য শ্রমিকরা মাটিতে ২৫ ফুট পাইপ বসাতেই প্রবল বেগে পানি উঠতে থাকে। এছাড়াও একটি গন্ধ বের হতে থাকে।

Advertisement

তিনি বলেন, গ্রামের মানুষ বিষয়টি বুঝতে পারেনি। কিন্তু শ্রমিকদের সন্দেহ হলে তারা পাইপের সামনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। তখন তারা আমাকে জানায় এখানে গ্যাস আছে। আমি অনেক ভয় পাই। তাদের অন্যস্থানে কল বসানোর জন্য বলি। সেখানেও পাইপ বসালে একই ঘটনা ঘটে। এখন টিউবওয়েল ওভাবেই পড়ে রয়েছে। আমরা গ্যাসের ব্যবহার জানি না। আর এটা সম্পর্কে জ্ঞানও নেই।

সাইফুল ব্যাপারী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, গত এক মাস আগে তিনি বাড়ির উঠানে একটি টিউবওয়েল বসান। শ্রমিকরা চলে গেলে সেই টিউবওয়েল থেকে গর গর শব্দ ও গন্ধ বের হতে থাকে। তখন তারা ভয় পান। তার এক ছেলে কল শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা আগুন জ্বালিয়ে দিতে বলে। তাদের কথামত আগুন জ্বালিয়ে দিলে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে। এ সময় সাইফুল ব্যাপারী ভয়ে তার টিউবওয়েলের পাইপ বের করে ফেলেন। তারপরও শব্দ ও গন্ধ বের হলে গর্তে মাটি ও বালু দিয়ে চাপা দিয়ে দেন। তাতেও ঝামেলা শেষ হয়নি।

তিনি জানান, গ্যাস উঠছে এ খবর এলাকাবাসী শুনে ছুটে আসছেন আমার বাড়িতে। ওই গর্তে আনন্দ করে সাবই আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে আমরা পানি দিয়ে অনেক কষ্ট করে আগুন নেভাতে থাকি।

হানিফ বয়াতি জানান, গত ১৫ দিন আগে বাড়িতে টিউবওয়েল বসালে সেখান থেকে গ্যাস বের হতে শুরু করে। গ্রামের মানুষ গ্যাস কী জিনিস জানে না। এলাকার লোকজন বাড়িতে এসে ওই টিউবওয়েলে আগুন ধরিয়ে আনন্দ করছে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, তার বড় ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। সে ঢাকায় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পেরেছে ওই গ্যাস দিয়ে রান্না করা যায়। এবার ঈদে আসলে ছেলে রান্নার করার জন্য পাইপ বসাবে।

স্থানীয় বাচ্চু মিয়া জানান, এ এলাকায় প্রায় ২ মাস ধরে টিউবওয়েল ও ডোবা থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। স্থানীয়রা আগুন ধরিয়ে দিয়ে আনন্দ করছে। তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের মাটির নিচে গ্যাস রয়েছে এটা আমাদের জন্য একটি সু খবর। এবার আমাদের গ্রাম অনেক উন্নত হবে।’

আরেক স্থানীয় মো. ফরিদ মিয়া জানান, তাদের গ্রামের এ গ্যাস সরকারিভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। যদি এখানে প্রচুর গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে তা উত্তোলন করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে রান্নার জন্য লাইন দেয়া হোক।

পাশাপাশি ওই গ্যাস দিয়ে এ গ্রামে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে এলাকার বেকারত্ব দূর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

রাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান খান জানান, গ্যাসের ওঠার বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

এছাড়া বিষয়টি দ্রুত পরীক্ষার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, তারা বিষয়টি জেনেছেন। সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখছে। এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, ভোলার বোরহানউদ্দিন ও সদর উপজেলার ভেদুরিয়া এলাকায় দুটি গ্যাস ফিল্ড থেকে বাণিজিকভাবে গ্যাস উত্তলন করা হচ্ছে। রাজাপুরের চর সুলতানী গ্রামে গ্যাসের পর্যাপ্ত মজুদ পাওয়া গেলে এটা নিয়ে জেলায় তৃতীয় গ্যাস ফিল্ড হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএস