কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে আকাশপথে টিকিটের দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। ঈদে টিকিটের ওপর চাপ পড়বেই-এমনটি নিশ্চিত হয়ে বিমানের অপেক্ষায় থাকেন তারা। তবে শুরুতেই আকাশপথের বুকিং শেষ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অবৈধ কর্মীদের দেশে ফেরার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে কাক্সিক্ষত তারিখের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ টিকিট। এই সুযোগে উড়োজাহাজগুলো ভাড়া বাড়িয়েছে দেড় থেকে দ্বিগুণ।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাওয়া-আসার ১১০০ রিঙ্গিতের টিকিট এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০০-২০০০ রিঙ্গিতে। তাও মিলছে না। আকাশপথের টিকিটের এত দাম বৃদ্ধি কেন-জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় খেয়াল খুশিমতো ভাড়া বাড়াচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো।
শুধু ঈদই নয়, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে দেশটির সরকার। এ দুটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
এদিকে স্বল্পমূল্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কোনোরূপ হয়রানি ছাড়া ফ্লাইট টিকিট দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য ফ্লাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম। কুয়ালালামপুর-ঢাকা ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইকমিশনে এ সম্পর্কিত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, অবৈধ অভিবাসী যারা দেশে যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার বিফোরজি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচির নিয়মানুযায়ী, ইচ্ছুকদের আগেই ফ্লাইট টিকিট ক্রয় করতে হবে এবং পরে ইমিগ্রেশনে আবেদন করতে হবে। তাই প্রবাসীরা যাতে ফ্লাইট টিকিট সহজে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।
Advertisement
এ কর্মসূচি সফল করতে এয়ারলাইন্সগুলো সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে।
উল্লেখ্য, শুধু সরাসরি ফ্লাইট যেমন : কুয়ালালামপুর-ঢাকা বা জহুরবারু-কুয়ালালামপুর-ঢাকা বা পেনাং- কুয়ালালামপুর-ঢাকা ফ্লাইট টিকিট ইমিগ্রেশন গ্রহণ করবে।
সভায় সংশ্লিষ্ট সবার উদ্দেশে হাইকমিশনার বলেন, ‘এ প্রোগ্রামের আওতায় কালোবাজারিদের দ্বারা যাতে সাধারণ কোনো কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সবার দৃষ্টি রাখতে হবে।’
তবে প্রবাসীরা বলছেন, ভাড়া কত নেয়া হচ্ছে বা কত বাড়তে পারে তা নিয়ে প্রতি মুহূর্তে তদারকি করা প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ, ঈদ এলেই বাড়ানো হয় টিকিটের দাম। সংশ্লিষ্টদের আচরণ দেখে মনে হয় কৃত্রিম সংকট তৈরি করেই বাড়তি অর্থ আদায় করে নেয়া হচ্ছে।
Advertisement
ট্র্রাভেলস এজেন্সিতে আসা যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চাহিদার তুলনায় উড়োজাহাজগুলোর ফ্লাইট কম থাকায় অধিকাংশ আসনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। অবিক্রিত যা আছে তার জন্য গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্য।
প্রবাসী রতন মিয়া বলেন, ‘যাওয়া-আসার যে টিকিটের মূল্য ১১০০ রিঙ্গিত, সেই টিকিট ১৫০০-২০০০ রিঙ্গিতে কেনা লাগছে।’
ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফা না করে ঈদে ঘরমুখো প্রবাসীযাত্রীদের জন্য ছাড় দেয়া উচিত বিমান সংস্থাগুলোর। কিন্তু ঘটছে উল্টো।
এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, চাহিদা বাড়ায় এ রুটের বিমান টিকিটের দাম আকাশচুম্বী। সব এয়ারলাইন্সের ঈদের আগের টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। এ সুযোগে সবকটা এয়ারলাইন্সই টিকিটের দাম বাড়িয়েছে তাদের খেয়ালখুশিমতো। এদের নিয়ন্ত্রণ করা ও দেখভাল করার কেউ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএস-বাংলার সহকারী ম্যানেজার (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কম ভাড়ার টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে যায়। ফলে শেষ মুহূর্তে এসে কেউ টিকিট কাটতে গেলে সর্বোচ্চ ভাড়ার টিকিটই মিলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইউএস-বাংলায় টিকিট কাটলে একটা টিকিটের মেয়াদ এক মাস, ছয় মাস ও একবছর থাকে। এ সময়ের মধ্যে বিক্রিত টিকিটের তারিখ আগে বা পরে পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এয়ার এশিয়া, মালিন্দো বা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এই সিস্টেম নেই। যে তারিখের টিকিট সে তারিখেই ফ্লাইট করতে হবে। এ ছাড়া কেউ যদি ফ্লাইট মিস করে পুনরায় ওই টিকিটে যাতায়াত করতে পারবে না। কিন্তু এ সুযোগটা ইউএস-বাংলায় রয়েছে। ফ্লাইট মিস করলে পরবর্তী ফ্লাইটে যাত্রী যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
অভিযোগ উঠেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কুয়ালালামপুর রুটের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ঈদের আগে কোনো টিকিটই নেই। একই অবস্থা অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার ইমরুল কায়েছ। তিনি বলেন, ‘এয়ারলাইন্সের সিট এমনিতেই সীমিত। সাধারণত তিন-চার মাস আগে থেকেই অনেকেই টিকিট কেটে রাখে। অনলাইনে আমরা সব টিকিট উন্মুক্ত করেছি। এটা আটকে রাখার কিংবা ব্লক করে রাখার সুযোগ নেই। বিমান আগের তুলনায় এখন আরও অনেক বেশি স্বচ্ছ।’
এসআর/এমএস