জাতীয়

ডেঙ্গুতে বেড়েছে রক্তের চাহিদা, যা বলছেন চিকিৎসক

ভোলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নিলুফা। তার রক্তে প্লাটিলেট ১৮ হাজারে নেমে এসেছে। নিলুফার আত্মীয়-স্বজনদের রক্তের ব্যবস্থা করে রাখতে বলেছেন চিকিৎসকরা। তবে দেয়া লাগবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত শনিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় জানানোর কথা চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের মতে, ২০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নেমে এলে তার শরীরে প্লাটিলেট দেয়ার প্রয়োজন হয়।

Advertisement

ঢামেক হাসপাতালে নিলুফার মতো ৬৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। শনিবার পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ হাজার ৫২৮ জনে দাঁড়িয়েছে। রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে ডেঙ্গু রোগীর অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়। ২০ হাজারের নিচে প্লাটিলেট নেমে এলে সাধারণ ডেঙ্গু রোগীকে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হয়।

দেশে মারাত্মক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রক্তের চাহিদাও বেড়ে গেছে। ঢামেক হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক, স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। প্লাটিলেট কমাসহ আরও বেশকিছু উপসর্গ দেখা দিলে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠন সন্ধানীর সাধারণ সম্পাদক মো. ইহসানুল করিম তানজিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘রক্তের চাপ বেশি স্বাভাবিকের তুলনায়।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে নেগেটিভ রক্তের চাহিদা একটু বেশি। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা করতে অনেক সমস্যাও হয়। তবে কোনো না কোনোভাবে রক্তের ব্যবস্থা হয়ে যায়।’

‘এমন কোনো রোগী নেই যে, সে রক্তের অভাবে মারা গেছে’, দাবি তানজিমের। তার বক্তব্য, ‘আসলে ডেঙ্গু কার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে, বলা যায় না। এমনও হতে পারে, সব দিলেন মারা গেল, আবার কিছুই দিলেন না, বেঁচে গেল।’

জাগো নিউজের কাছে বিষয়টি আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন ঢামেকের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে কর্তব্যরত ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ডা. মশিউর রহমান।

তার বক্তব্য, ‘একজন মানুষের শরীরে দুই লাখের ওপর প্লাটিলেট থাকা স্বাভাবিক। ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে সাধারণত ডেঙ্গু রোগীকে পরামর্শ দেয়া হয় প্লাটিলেট নেয়ার জন্য। রক্তে প্লাটিলেট ধীরে ধীরে কমলে ভয়ের কারণ কম। তবে দেড় লাখ থেকে হঠাৎ ৫০ হাজার কিংবা ৮০ হাজার থেকে হঠাৎ ২০ হাজার- প্লাটিলেটের এমন পতন হলে তা ভয়ের কারণ হতে পারে।’

Advertisement

‘তবে একবার প্লাটিলেট বাড়তে থাকলে, তা সাধারণত কমে না। অর্থাৎ ডেঙ্গু রোগীর শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতির দিকেই যায় সাধারণত’, যোগ করেন মশিউর রহমান।

ডেঙ্গুতে ঝুঁকি অন্য উপসর্গ

চিকিৎসক মশিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে সবসময় যে প্লাটিলেট দিতে হয়, এমন নয়। অনেক প্লাটিলেট শূন্যের কোঠায় পৌঁছে গেলেও রোগীর মৃত্যু হয় না। এ ক্ষেত্রে অন্য উপসর্গগুলোর দিকে নজর দিতে হয়। রোগীর প্রেসার একেবারে কমে গেছে কি না, শকে চলে যাচ্ছে কি না, অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে কি না, বুকে পানি জমছে কি না, ইনফেকশন হচ্ছে কি না- এসব মারাত্মক জটিলতার কারণে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

প্লাটিলেট দিলে রক্তবাহিত রোগসহ হার্ট, কিডনির সমস্যা হতে পারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলেও জানান এই চিকিৎসক। তার মতে, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ডেঙ্গু রোগীকে প্লাটিলেট দেয়ার পরামর্শ দেন।

যেভাবে ডেঙ্গু রোগীরা রক্ত নেয়

চিকিৎসক মশিউর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত প্রচুর রোগী আসছে। ফলে রক্তের চাহিদা তো বাড়ছে। আগের চেয়ে রক্তের চাহিদা এখন প্রায় দ্বিগুণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ফেরেটিক প্লাটিলেট অথবা প্লাটিলেট কনসেনট্রেশন- এই দুই পদ্ধতিতে ডেঙ্গু রোগীদের প্লাটিলেট দেয়া হয়। প্লাটিলেট কনসেনট্রেশনে সাধারণত চারজন রক্তদাতা লাগে। অনেক সময় চারজন রক্তদাতা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে মেশিনে ফিল্টারের মাধ্যমে একজন রক্তদাতা থেকে পাওয়া রক্ত পাঁচ-ছয়জন রক্তদাতার সমান প্লাটিনাম পাওয়া যায়। তবে এই ফিল্টারের খরচ একটু বেশি। ঢামেক হাসপাতালে এই ফিল্টার করতে ১৩ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বাইরে তা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।’

পিডি/বিএ/এমএস