আন্তর্জাতিক

যুবরাজ এক সময় যার পরামর্শ নিতেন, এখন তারই শিরশ্ছেদ করছে সৌদি

সৌদি আরবের সমাজ সংস্কারে এক সময় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান পরামর্শ চাইতেন দেশটির ধর্ম প্রচারক শেখ সালমান আল-আওদার কাছে; এখন সেই ধর্ম প্রচারকের শিরশ্ছেদ করছে সৌদি। রোববার সৌদি আরবের ধর্মীয় এই প্রচারকের শিরশ্ছেদ করা হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শিগগিরই এই ধর্ম প্রচারকের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করে তাকে শর্তহীন মুক্তি দিতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

Advertisement

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০১২ সালের ঘটনা। ওই বছরের একদিন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ধর্ম প্রচারক শেখ সালমান আল আওদার বাসভবনে আসেন। সেই সময়ের ২৭ বছরের যুবরাজ বিন সালমানকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য বাসায় অপেক্ষা করছিলেন ক্যারিসম্যাটিক প্রচারক আওদার।

আওদার ছেলে আব্দুল্লাহ আলাওধ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক। তিনি বলেন, আমরা যুবরাজের এই আগমনকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করিনি। তিনি সাধারণ একজন যুবরাজ ছিলেন মাত্র।

আরও পড়ুন : কঙ্গোর নাগরিকদের হজে নিষেধাজ্ঞা সৌদির

Advertisement

প্রকট উচ্চাকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও বিন সালমানকে সেই সময় নবাগত রাজনীতিক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তার বাবা ছিলেন রিয়াদের গভর্নর এবং তখনও বাদশাহ হননি। দেশটির রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চোখে বিন সালমান সেই সময় শুধুমাত্র সৌদি রাজ পরিবারের হাজার হাজার সদস্যদের একজন।

আওদার ছেলে আব্দুল্লাহ আলাওধ বলেন, পরে সৌদি আরবকে বদলে দিতে আওদার কাছে থেকে নেয়া পরামর্শে উদ্যোমী হয়ে ওঠেন আজকের এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান। রিয়াদের তৎকালীন গভর্নর আজকের বাদশাহ সালমানের সঙ্গেও সৌদির সংস্কার নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে পরামর্শ দেন আওদা।

পাঁচ বছর পরে ২০১৭ সালে বাদশাহ সালমান তার ছেলে এমবিএসকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দেন। এমবিএস নিয়োগ পাওয়ার তিন মাসের মাথায় আওদাকে গ্রেফতার করে দেশটির আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।

আরও পড়ুন : বাহরাইনে শিয়া দুই তরুণসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকর

Advertisement

এর এক বছর পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের প্রসিকিউটর আওদাকে আরো ৩৭ জনের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করেন। রোববার এই ধর্মপ্রচারককে আবারও আদালতে তোলা হবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে তার শিরশ্ছেদের সাজা নিয়ে।

আওদার ছেলে আব্দুল্লাহ আলাওধ বলেন, তার বাবাকে দুই বছর নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছিল। প্রথম কয়েক মাস ডিটেনশন সেন্টারে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তিনি হাঁটতে পারতেন না, পা বেঁকে গিয়েছিল, হাত কড়া পরানো ছিলেন। কারারক্ষীরা দূর থেকে তার দিকে খাবার ছুড়ে মারতেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলেও ৬১ বছর বয়সী এই ধর্ম প্রচারকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কিছু মিথ্যা অভিযোগ এনেছে সৌদি। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণা পরিচালক লিন মালওফ বলেন, আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে শেখ সালমান আল-আওদাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়া হতে পারে এবং তা কার্যকর করবে সৌদি। সাজানো বিচারের মাধ্যমে ধর্মীয় এই প্রচারককে মৃত্যুদণ্ড না দিতে এবং বিনা শর্তে মুক্তি দিতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র : সিএনএন, মিডল ইস্ট মনিটর।

এসআইএস/এমকেএইচ