ঝিনাইদহে এখন পর্যন্ত ১১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে তিনজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
Advertisement
এদিকে, ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটছে ঝিনাইদহ শহর থেকে গ্রাম এলাকার মানুষের। ১১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় মশা নিধনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ঝিনাইদহে ১১ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে তিনজন জেলা থেকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি আটজন ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন।
আরও পড়ুন : বাবাকে কৃষিকাজ থেকে মুক্তি দিতে পারলেন না স্বাধীন
Advertisement
তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। সারাদেশে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ বিভাগ সতর্ক থাকলেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নেই ডেঙ্গু শনাক্ত করার ব্যবস্থা। ফলে বাইরের ক্লিনিকে গিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। আবার জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের আতঙ্কিত করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত অমিতা রানী বলেন, ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস সড়ক এলাকায় আমার বাসা। চারদিন আগে শরীরে ব্যথা অনুভব হয়। পরে জ্বর নিয়ে সদর হাসপাতালে গেলে রক্ত পরীক্ষার পর ধরা পড়ে ডেঙ্গু।
আরও পড়ুন : জায়গা না পেয়ে সিঁড়িতে ডেঙ্গু রোগী
পাশাপাশি সদর উপজেলার মধুপুর এলাকার শিশু আশিকের শরীরেও পাওয়া গেছে ডেঙ্গুর জীবাণু। গত বৃহস্পতিবার রক্ত পরীক্ষা শেষে জানা যায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে আশিক।
Advertisement
শহরের স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, জেলা শহর কিংবা বিভিন্ন উপজেলায় মশা নিধনে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিভিন্ন এলাকার ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে আছে। বদ্ধ জায়গা জমে থাকে পানি। যা ডেঙ্গু মশার বংশ বিস্তারের কারখানা।
আরও পড়ুন : রক্তের চাহিদা পাঁচগুণ, হিমশিম খাচ্ছে ব্লাড ব্যাংকগুলো
সদর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিবলী বলেন, চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় যাই। সেখান থেকে ঝিনাইদহে ফেরার কয়েকদিন পর জ্বর আসে। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসক বলেন এখানে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে পরীক্ষা করে আসেন। বাইরে থেকে পরীক্ষা করে জানতে পারি ডেঙ্গু হয়েছে। চিকিৎসক জানান যেকোনো সময় খারাপ অবস্থা তৈরি হতে পারে, আইসিইউ লাগতে পারে, ঢাকায় চলে যান। এভাবে রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ান চিকিৎসকরা।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জুনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এবারের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর লক্ষণগুলো ভিন্ন। এবার হেমোরেজিক ফিভার বেশি হচ্ছে। রক্তক্ষরণ, বমি, পেটব্যথা, খাদ্যনালি, মূত্রনালিসহ বিভিন্ন জায়গায় রক্তক্ষরণের উপসর্গ নিয়েই ডেঙ্গুতে আক্রান্তরা হাসপাতালে আসে। সেই সঙ্গে চার থেকে পাঁচদিনের মধ্যে এসব রোগীর ক্রিটিক্যাল অবস্থা তৈরি হয়। আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা দেয়ার।
আরও পড়ুন : ঢাকা মেডিকেলে একদিনে ২৩৩ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি!
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আযুব আলী বলেন, ডেঙ্গু শনাক্ত করার ব্যবস্থা হাসপাতালে না থাকায় বেসরকারি ক্লিনিকের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। তবে ওপর মহলকে আমরা জানিয়েছি ডেঙ্গু শনাক্ত করার উপকরণ সরবরাহের জন্য। আর হাসপাতালে আসা রোগীদের যত্ন সহকারে চিকিৎসা দেয়ার জন্য জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারদের বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সার্বিকভাবে সচেতন রয়েছি। ডেঙ্গু নিধনে ময়লা বা ড্রেন পরিষ্কারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি তথ্য অফিসের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হবে। বেশি সংখ্যক রোগী হাসপাতালে আসলে প্রয়োজনে পৃথক ইউনিটের ব্যবস্থা করা হবে। ছয় উপজেলায় পৃথক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সার্বিক খোঁজখবর রাখছে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এএম/এমএস