অর্থনীতি

স্বভাব না বদলালে হজে গিয়ে কী লাভ : এনবিআর চেয়ারম্যান

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, অনেক কর্মকর্তা হজে যাচ্ছেন। হজে যাওয়ার পর যদি তাদের স্বভাব না বদলায় তাহলে হজে গিয়ে কী লাভ? নতুন ভ্যাট আইনের ওপর আয়োজিত কর্মশালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা ভ্যাট আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি এ কথা বলেন।

Advertisement

শনিবার (২৭ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত কর্মশালায় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হয়রানির কথাটা অনেকের মুখে আসবে। হয়রানির বিষয়টা ওদের সঙ্গে সমঝোতায় না গিয়ে, আমাদের বলেন- ওই অফিসার হয়রানি করছে। তখন তাকে আমরা শক্ত হাতে ধরবো।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন অফিসারদের সঙ্গে কথা বলি তখন এ কথাগুলো বলি, আপনি ব্যবসায়ীদের বাধ্য করে যেটা নেন, সেটা চুরি, সেটা ময়লা খাবার।’

‘অনেকে হজ করতে যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কিন্তু কম লোক না। হজের মৌসুমে আমি ছুটি দিতে দিতে ইয়ে হয়ে যায়। এখন যদি হজের পরে স্বভাব পরিবর্তন না হয়, তাহলে কি লাভ এটা করে?’ বলেন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

Advertisement

এবার ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, যারা মেশিন নষ্ট করবে তাদের দায়ী করা হবে। ব্যবসায়ীদেরও, আমাদের কর্মচারীদেরও। মেশিন নষ্ট করা যাবে না, নষ্ট করলে আপনার নিজের পয়সায় আবার সেটা লাগিয়ে দিতে হবে। একটা মেশিন কিনে দিতে হবে।

অনলাইনে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে ইলেক্ট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালু করতে একটু সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ক্রয় করতেছি। ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ হতে হবে, আবার ব্যবসায়ীর সংখ্যাও একটু বেশি। সবাইকে দিতে দিতে একটু সময় লাগবে। কিন্তু তাই বলে ভ্যাট আদায়টা বন্ধ থাকবে না। ভ্যাট আদায় করতেই হবে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এবার রেভিনিউ (রাজস্ব) আদায়ের পরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার নিচে থাকবে। ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা ছিল আমাদের লক্ষ্যমাত্রা। এটার জন্য খুব সমালোচনা হচ্ছে। মিডিয়ার লোকজন এবং অনেক থিংক ট্যাংক বলছে রেভিনিউ কেন আদায় হয় না। রেভিনিউ তো আসলে গলায় পাড়া দিয়ে আদায় করা যায় না। রেভিনিউ আদায়ে সবার সহযোগিতা দরকার।

কিছু সংশোধনী এনে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রচলিত ভ্যাট আইনে পৃথিবীর সব দেশে একটা রেটই থাকে। আমরা আমাদের ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রেট করেছি। ভ্যাট কাঠামো নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। উন্নত দেশে এর চেয়ে অনেক বেশি ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে হয়। ফাঁকি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, বড় বাজেটের জন্য বড় রাজস্ব দরকার। তাই যাদের জন্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রযোজ্য তাদের সবাইকে ভ্যাটের আওতায় আনা উচিত। দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। অবকাঠামোখাতে উন্নয়ন হচ্ছে। এসব ব্যয় মেটাতে কর অপরিহার্য। কেননা দেশে এখন বিদেশি সহায়তার নির্ভরতা অনেক কম।

ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) শাহনাজ পারভীন, উপ প্রকল্প পরিচালক জাকির হোসেন খান, ডিসিসিআইয়ের আয়কর উপদেষ্টা স্নেহাশিষ বড়ুয়া প্রমুখ।

ডিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভ্যাট ফ্রি লিমিট ৫০ লাখ টাকায় উন্নীতকরণ, ভ্যাট রিফান্ড সিস্টেম এবং ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে অগ্রিম কর অব্যাহতি ইত্যাদি পদক্ষেপ বেসরকারিখাত নির্ভর অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, নতুন আইনের সুফল বাস্তবায়নে অংশীজন, বেসরকারিখাত ও রাজস্ব বোর্ডের মাঝে অংশগ্রহণমূলক সংলাপের মাধ্যমে রাজস্ব কর্মকর্তার জুডিশিয়াল ক্ষমতা, বিরোধ নিষ্পত্তি আপিলের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান ও ভ্যাট রিটার্ন সিস্টেম সম্পূর্ণ অনলাইন করা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্য প্রতিবন্ধকতাসহ সব সমস্যার সমাধান হতে পারে।

এ সময় ডিসিসিআই সভাপতি উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমাদনির ওপর অগ্রীম কর অব্যাহতি, ১৫ শতাংশের মতো ১০, ৭, ৭.৫ ও ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করলে ভ্যাট রিবেট দেয়া এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ভ্যাটের আওতামুক্ত রখার দাবি জানান।

এমএএস/এএইচ/এমএস