জাতীয়

বেড়েছে ডাকাতি-ছিনতাই : ছাড় পাচ্ছে না পুলিশও

পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কেএম নূর-ই আলম গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা দেন। কাছে ছিল এলজি২৪ এইচ৪৫৪এ মডেলের এলইডি টিভি, সিম্ফনি এল৬২ মডেলের মোবাইল ফোন, দুই সেট ইউনিফর্ম ও নগদ তিন হাজার টাকা।

Advertisement

গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মহাখালীর আমতলী ফ্লাইওভারের নিচে একটি সিলভার রঙের প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো-গ-১৪-৪৫৮৫) তার সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়িটি নেত্রকোনায় যাবে বলে জানায়। ৩০০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় ওই প্রাইভেটকারে ওঠেন এসআই নূর-ই আলম। ওঠা মাত্রই অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয় তাকে।

প্রাইভেটকারের পেছনে ও দুই দরজার দুই পাশে মোট চারজন তাকে মাঝখানে বসিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন। তার শরীর তল্লাশি করে মানিব্যাগ নিয়ে নেয়া হয়। এটিএম কার্ড দিয়ে বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় বেধড়ক মারপিট করা হয়। কাছে থাকা সব মালামাল লুট করে কিল-ঘুষি দিয়ে বাম চোখ করা হয় রক্তাক্ত। মারধরের পর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী দল।

ওই ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের সহযোগিতায় এসআই নূর-ই আলমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তিনি মামলা করেন। ওই মামলায় ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

Advertisement

গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা হলেন- বজলু আলমগীর, মাসুম বিল্লাহ, মুক্তার হোসেন ও মো. আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো-গ-১৪-৪৫৮৫), চাকু, লাঠি, রড জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ের মালামালও।

এ ব্যাপারে শনিবার দুপুরে (২৭ জুলাই) ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাইভেটকারে ভাড়ায় যাত্রী বহনের নামে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়। আগে থেকে যাত্রীবেশে কয়েকজন ছিনতাইকারী বসে থাকে। কিছু না বুঝে প্রাইভেটকারে ওঠামাত্র অস্ত্রের মুখে জিম্মির পর টাকা ও মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে মারধরের পর ছেড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।’

তিনি বলেন, ‘রাজধানীর খিলক্ষেত, মহাখালী, হাতিরঝিল এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা সক্রিয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুধু ছিনতাই নয়, গত এক মাসে অর্ধশতাধিক ডাকাত দলের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত এক মাসেই ডিএমপির বিভিন্ন থানায় দুই শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা হয়েছে।

Advertisement

গত ২৪ জুলাই রাতে খিলগাঁওয়ের সিগমা হাসপাতাল রোড এলাকায় ডাকাতির চেষ্টা করছিল শরীফ, রকি, রাশেদ, রিমন ও রিয়াদ নামে পাঁচ ডাকাত। খবর পেয়েই হাতেনাতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি চাপাতি ও তিনটি ছুরিসহ তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ১৯ জুলাই রাজধানীর তেজগাঁও থানা এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রেজাউল করিম ওরফে রাজু (২২), মুন্না (২৪), জুয়েল (১৮), আল-আমিন (২০) ও সাগর (১৮) নামে পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পশ্চিম বিভাগ। উদ্ধার করা হয় একটি চাপাতি, দুটি ছুরি, একটি লোহার পাইপ ও একটি হাতুড়ি।

গত ১৬ জুলাই ডাকাতির চেষ্টাকালে কারওয়ানবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। পুলিশ সেজে ডাকাতিতে জড়িত আট ডাকাতকে গত ৯ জুলাই রাজধানীর গুলিস্তান হকার্স মালিক সমিতি মার্কেট এলাকা থেকে আটক করে ডিবির দক্ষিণ বিভাগ।

আহমেদ ফারুক নামে এক ভুক্তভোগী জানান, গত ২৩ জুলাই ক্যান্টনমেন্টের পোস্ট অফিস থেকে ট্রাস্ট পরিবহনে উঠেছিলাম। ৫ মিনিট পর এক মেয়ে গায়ে বমি করে দিল। এর ৩০ সেকেন্ড পর বুঝলাম পকেট থেকে যা ছিল সব গায়েব। নিখুঁতভাবে আমার নতুন প্যান্টটা কেটে ফেলেছে। ক্যান্টনমেন্টের মধ্যেই যদি এমন অবস্থা হয় অন্য জায়গায় না জানি কী অবস্থা? এ জাতীয় ঘটনা ট্রাস্ট পরিবহনে আগেও ঘটেছে। ব্যাপারটা রহস্যজনক।

সর্বশেষ গত ২৬ জুলাই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির লুণ্ঠিত মালামালসহ আটজনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগের একটি টিম।

গ্রেফতাররা হলেন- স্বপন, জলিল খান, জালাল হাওলাদার, মোজাম্মেল হক শিশির, মনির হোসেন, শহিদুল ইসলাম, এনামুল হক ও সোহেল রানা।

এ সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫ টন পিতলের মালামাল এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি তালা ভাঙার যন্ত্র, দুটি চাপাতি ও তিনটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

এ ব্যাপারে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম বলেন, গত ২৮ জুন রাতে হাজারীবাগ থানাধীন কেবি মেটাল ওয়ার্কশপ নামের কারখানায় ঢুকে দারোয়ান ও কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে মারধর ও হাত-পা বেঁধে ১৫ টন পিতলের মালপত্র নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল সাড়ে ৬০ লাখ টাকা।

গ্রেফতার ডাকাত দলের সদস্যরা জানান, তারা স্বর্ণের দোকান, চালের আড়ত, রাস্তার মালামাল বোঝাই ট্রাক, যাত্রাবাহী বাস, বিভিন্ন শোরুম ও বিভিন্ন গোডাউনে ডাকাতি করে আসছিল। তারা প্রত্যেকেই একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি।

ডিএমপির এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা এলার্মিং হিসেবে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ সক্রিয় গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে তৎপর ডিবি পুলিশ।

জেইউ/এনডিএস/এমএস