জাতীয়

প্রধান বিচারপতির অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অপসারণ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে একটি আবেদন পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

Advertisement

রোববার সংবিধান লঙ্ঘন, শপথ ভঙ্গ, অসদাচারণের অভিযোগে প্রধান বিচারপতির অভিসংশন চেয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর তিনি এ চিঠি পাঠান।

চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদেরকে আবেদনের পাঠানো হয়েছে।

ওই আবেদনে বিচারপতি মানিক তার পেনশন নিয়ে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনী’ দাবি করে, তা তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ব্যক্তিগত বিরাগের বশবর্তী হয়ে তাকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রেখেছেন বলেও দাবি করেন তিনি। চিঠিটি সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় (বঙ্গভবন নিরাপত্তা) গ্রহণ করেছে। আবেদনে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী লিখেছেন, আমি ও জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আপনি (রাষ্ট্রপতি) কতৃক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) আর্টিকেল মোতাবেক বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের বিধান মোতাবেক এই মর্মে শপথ গ্রহণ করেছি, বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব এবং ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব। পেনশনের বিষয়টি তুলে ধরে আবেদনে বিচারপতি মানিক লিখেছেন, আমি বিনীতভাবে আপনাকে অবহিত করছি, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে আমার সর্বশেষ কর্মদিবস আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর। এ কারণে আমি প্রধান বিচারপতিকে আমার পেনশনের কার্যক্রমের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসকে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করি। পরে প্রধান বিচারপতি গত ২৫ আগস্ট সুপ্রীমকোর্টের রোজস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে একটি চিঠি দেন। যেখানে সকল অপেক্ষমান রায় লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার পেনশন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না বলে জানানো হয়।  এই চিঠির জবাবে আমি গত ১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি একটি চিঠি দেই। যেখানে প্রধান বিচারপতির ওই সিদ্ধান্তের (পেনশন স্থগিত করা) কোন আইনগত ভিত্তি নেই এবং অতীতে অবসরে যাওয়া সকল বিচারপতিগণই অবসরের পরেও রায় লিখেছেন। আমার প্রতি প্রধান বিচারপতির এই আচরণ বৈষম্যমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ। বিচারপতি মানিক আবেদনে বলেন, এর পর প্রধান বিচারপতি গত ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে আমাকে আরেকটি চিঠি দেন, যেখানে আমার পেনশন বিষয়ক কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি অবহিত করেন। একই সঙ্গে ওই চিঠিতে আমার অবসরে যাওয়ার পূর্বে যে সমস্ত মামলার রায় লেখা সম্ভব হবে না ওই সব মামলার নথি সংশ্লিষ্ট দফতরে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করেন। এছাড়া ওই চিঠিতে আমাকে ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হিসেবে উল্লেখ করে মামলার রায় না লিখে বিদেশে চলে যেতে পারি মর্মে সংশয় প্রকাশ করেন, যা কল্পনা প্রসূত ও অলীক। আবেদনে বিচারপতি মানিক আরো বলেন, প্রধান বিচারপতির ২ সেপ্টেম্বরের চিঠির জবাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর আমি প্রধান বিচারপতিকে আরেকটি চিঠি দেই। যেখানে আমি তাকে জানাই, ইতিপূর্বে অবসরে যাওয়া কোন বিচারপতিকেই নথি ফেরত দেয়ার জন্য কখনোই বলা হয়নি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমার প্রতি তার এ আচরণ জিঘাংসামূলক। তার এইরূপ আদেশ আমার স্বাধীন বিচারকার্যে হস্তক্ষেপের সামীল ও সংবিধানের ৯৪ (৪) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। এর মাধ্যমে তিনি সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে করা আবেদনে বিচারপতি মানিক আরো লিখেছেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বরের আপীল বিভাগের বেঞ্চের বিচারিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর পর থেকে আজ (রোববার) পর্যন্ত আমাকে কোন বিচারিক বেঞ্চে দেয়া হই নাই। গত ৮ সেপ্টেম্বরও আমি বিচারিক বেঞ্চে কর্মরত ছিলাম। ব্যাক্তিগত বিরাগের বশবর্তী হয়ে তিনি কর্মরত বিচারক হিসেবে আমাকে বিচারকার্য থেকে বঞ্চিত রেখে অসদাচরণ করেছেন, যা অভিসংশন যোগ্য। সংবিধানের ১০৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি কর্মরত বিচারপতিদের নিয়ে বেঞ্চ গঠন করেন। তবে কর্মরত কোন বিচারপতিকে বিচারিক কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করে বেঞ্চ গঠন করার অধিকার সংবিধান প্রধান বিচারপতিকে দেয় নাই। প্রধান বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘন করে আমাকে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা থেকে বিরত রেখেছেন এবং এখনো পর্যন্ত আমাকে দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছেন না। রাষ্ট্রপতির কাছে করা আবেদনে বিচারপতি মানিক আরো বলেন, সুপ্রীমকোর্টের প্রথা অনুযায়ী অবসরে যাওয়া বিচারপতিগণকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। কিন্তু প্রধান বিচারপতি তার ব্যাক্তিগত বিরাগের কারণে আমাকে বিদায় সংবর্ধনা থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্য সুপ্রীমকোর্টের দীর্ঘ দিনের রিতি ভেঙ্গে বিচারিক বেঞ্চ থেকে বাদ দিয়েছেন।রাষ্ট্রপতির কাছে করা আবেদনে বিচারপতি মানিক আরো লিখেছেন, আমি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একজন সহকর্মী। প্রধান বিচারপতি তার সহকর্মী বিচারপতি হিসেবে আমার প্রতি বিরাগের বশবর্তী হয়ে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তার মাধ্যমে প্রতিয়মান হয়, তিনি যে কোন অনুরাগ ও বিরাগের ঊধ্বে থেকে বিচার কাজ পরিচালনা করতে অক্ষম। প্রধান বিচারপতির এইরূপ কার্যক্রম আইনের রক্ষক হিসেবে তার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তার ভূমিকা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায়, অসাংবিধানিক ও সাংবিধানিক শপথভঙ্গ ও গুরুত্বর মিসকন্ডাক্ট, যা অভিসংশন যোগ্য বিধায় বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে আপনার কাছে প্রেরণ করলাম।

Advertisement

এফএইচ/এএইচ/আরআইপি