২১ বছর বয়সী বিদিশা ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই তিনি কানে শুনতে পান না। কথাও বলতে পারেন না ঠিকভাবে।
Advertisement
মূক-বধির হওয়ার জন্য ছোটবেলা থেকেই লড়াই করে বাঁচতে হয়েছে তাকে। বিদিশার এই শারীরিক ত্রুটিকে তিনি কোনও দিন স্বপ্নের চেয়ে বড় করে দেখেননি।
ছোট বিদিশার স্বপ্নগুলো কিন্তু ছোট্ট ছিল না। স্বপ্ন দেখতেন এক দিন মিস ওয়ার্ল্ড হবেন। কিন্তু কীভাবে সেই স্বপ্নকে সত্যি করা যায়? এ জন্য ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে চর্চা করতেন। আগ্রহ ছিল জানার।
তার সব থেকে বড় সঙ্গী ছিল বই। সুন্দরী প্রতিযোগিতাবিষয়ক বিভিন্ন ম্যাগাজিন বই বারবার পড়তেন। সময়, সুযোগ পেলেই দেখতেন টিভি।
Advertisement
ছোটবেলা থেকেই নাচ-গানের প্রতি ছিল ভীষণ আগ্রহ। মেয়ের উৎসাহ দেখে তার বাবা বিদিশাকে টেনিসে ভর্তি করে দেন। এটা ছিল তার স্বপ্নপূরণের প্রথম পদক্ষেপ। বিদিশাই প্রথম আন্তর্জাতিক স্তরের টেনিস প্রতিযোগিতায় (ডিফ অলিম্পিক) ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
প্রথমে বাবা-মায়ের সঙ্গে মুজফ্ফরনগরে থাকতেন বিদিশা। কিন্তু পরে কোমরে আঘাত পাওয়ায় মুজফ্ফরনগর, টেনিস— সব ছেড়ে সপরিবারে নয়ডায় চলে আসেন। সেখানেই এশিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন।
এরপর গুরুগ্রাম ও নয়ডায় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখান থেকেই জয়ী হয়ে ‘মিস ডিফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’ প্রতিযোগিতায় যান। গত ২২ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার মোম্বেলা শহরে মূল পর্বে আরও ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে তুখোড় লড়াইয়ের পর ‘মিস ডিফ ওয়ার্ল্ড ২০১৯’-এর মুকুট জিতে নেন বিদিশা।
ইনস্টাগ্রামে ছবি শেয়ার করে বিদিশা জানিয়েছেন, তার ‘তাণ্ডব নৃত্য’ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বিচারকেরা। বিদিশার তাল কিন্তু ‘বেতাল’ হয়নি। হিন্দু শাস্ত্রে ‘তাণ্ডব নৃত্য’কে শিবের তাণ্ডবলীলা বলে মনে করা হয়। ওইদিন বিদিশাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সবাই।
Advertisement
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ছবি শেয়ার করে বিদিশা সেখানে লিখেছেন, ‘এক দিন স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।’ মাথায় মুকুট তুলে দেয়ার সময় দু’চোখ জলে ভরে উঠেছিল।
তিনি লিখেছেন, ‘এই তো সবে শুরু। এখনও অনেক পথ চলতে হবে। সে জন্য আমি তৈরি।’
কবি রবার্ট ফ্রস্টকে উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ’।
আন্তর্জাতিক স্তরে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে। প্রতিযোগিতার আয়োজক ‘মিস অ্যান্ড মিস্টার ডিফ ওয়ার্ল্ড’। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা। শুরুর বছরে প্রতিযোগিতাটি হয়েছিল স্পেনের ম্যালোরকাতে।
জেডএ/জেআইএম