বলিউডের ছবিতে অভিনয় করতে যাচ্ছেন ছোট পর্দা থেকে চলচ্চিত্রে আসা নুসরাত ফারিয়া। বিঞ্চু দত্তের ‘গোয়াহ’ সিনেমায় ইমরান হাশমির বিপরীতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। একজন বাংলাদেশি অভিনেত্রী হিসেবে ফারিয়ার বলিউড যাত্রায় খুশির জোয়ার বইছে শোবিজে। কিন্তু একটি মিথ্যাচারে আহত হচ্ছেন দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। ফারিয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাবি করেছেন বলিউডে অভিনয় করা তিনিই প্রথম বাংলাদেশি নায়িকা। কিন্তু বলিউডে ফারিয়ার আগে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নায়িকাই অভিনয় করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাই ছবির সোনালী দিনের দর্শকপ্রিয় নায়িকা শাবানা, রোজিনা, ববিতা ও নুতন অভিনয় করেছেন বলিউডের ছবিতে। তারমধ্যে শাবানা ও রোজিনা ছবির মূল নায়িকা হয়ে কাজ করেছেন রাজেশ খান্না ও মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতে। কিন্তু সেইসব খোঁজ খবর না করেই, কোনো রকম তথ্য যাছাই-বাছাই না করেই ফারিয়া সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন তিনিই বলিউডে সুযোগ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি। দেশের প্রথম সারির সব দৈনিক ও অনলাইনেই নিউজ পোর্টালের নিউজ ও সাক্ষাতকারে এই ভুল তথ্য দিচ্ছেন তিনি। গণমাধ্যমগুলোও সাত পাঁচ না ঘেঁটে তাই ছেপে যাচ্ছেন। গণমাধ্যমে ফারিয়া বলেছেন, ‘আমিই প্রথমবারের মতো বলিউডের সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিনয় করছি।’ তার এই মন্তব্য সম্বলিত নিউজ ও সাক্ষাতকার ফেসবুকে শেয়ার করে বেড়াচ্ছে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ফেসবুক পেজটি।যা নিয়ে পাঠকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এর বৈরি প্রভাব পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। সেখানে সমালোচনার ঝড় বইছে ফারিয়াকে নিয়ে। পাশাপাশি ফারিয়ার মিথ্যাচারকে সমর্থন দেয়ায় চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার বিরুদ্ধেও নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। তাদের দাবি, ইতিহাস ক্ষতিগ্রস্থ করাটা অনুচিত এবং অপরাধ। আর একজন শিল্পী হিসেবে ফারিয়ার অবশ্যই তার ইন্ড্রাষ্ট্রির খবরাখবর রাখা উচিত। কোনো মন্তব্য করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত। সেইসাথে সিনিয়রদের সাফল্য ও অর্জনকেও সম্মান করা উচিত।প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালে ভারত বাংলাদেশ ও কানাডার যৌথ প্রযোজনায় ‘গেহরি চোট’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। যেটি হিন্দি ও বাংলা দুটি ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল। সেখানে নাদিম বেগ’র বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় নায়িকা ববিতা। এই ছিবিটিতে শশী কাপুর, পারভিন ববি ও শর্মিলা ঠাকুরের মত স্বনামধন্য শিল্পীরা অভিনয় করেছিলেন।এরপর ১৯৮৫ সালে হিন্দি পরিচালক শক্তি সামন্ত্য মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে ‘আর পার’ নামক ছবি বানান। সে ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী রোজিনা। আর দ্বিতীয় নায়িকা হিসেবে দেখা গিয়েছিলো নুতনকে। এ ছবিটি বাংলা ভাষায় ডাব করা হয়েছিল ‘অন্যায় অবিচার’ নামে। ইন্দো-বাংলার যৌথ প্রযোজনার ছবিটি ভারত, বাংলাদেশ- দুই দেশেই সুপার ডুপার হিট হয়েছিলো।আর ১৯৮৬ সালে বলিউডে মুক্তি পায় প্রমোদ চক্রবর্তীর ‘শত্রু’ ছবিটি। ইন্দো-বাংলার যৌথ প্রযোজনার এই ছবিতে বলিউডের প্রথম সুপারস্টার বলে খ্যাত নায়ক রাজেশ খান্নার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা। ওই ছবিতে গোলাম মোস্তাফাও একজন অসৎ পুলিশ অফিসারে চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া ছিলেন হাসান ইমাম ও নুতন। বাংলাদেশি নায়িকাদের বলিউডে এতগুলো ছবি থাকার পরও কী করে ফারিয়া ভুল তথ্য দিয়ে চলেছেন তা সত্যি বিস্ময়কর। অবশ্য ফারিয়ার পক্ষ নিতে তার ফেসবুক ফ্যান পেজ ও জাজের ফ্যান পেজ থেকে দাবি করা হচ্ছে- শাবানা ও ববিতারা বলিউডে কাজ করেছেন যৌথ প্রযোজনার ছবিতে। আর ফারিয়া কাজ করছেন বলিউডের প্রযোজকের একক প্রযোজনায়। এই যুক্তিকে আদতে হাস্যকর ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। কারণ, প্রযোজনা যারই হোক, যেভাবেই হোক ফারিয়ার অনেক আগেই বাংলাদেশি নায়িকারা দেশে বিদেশে ঢাকাই ছবির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ফারিয়া কেবল তাদের তৈরি করে যাওয়া পথে পা ফেলেছেন। এই গুজবও রটেছে চারপাশে। জাজ মাল্টিমিডিয়া ও এসকে মুভিজের প্রযোজনাতেই নির্মিত হবে বিঞ্চু দত্তের ‘গোয়াহ’ ছবিটি। আর তাদের পছন্দেই ছবিতে ইমরান হাশমিকে নায়ক হিসেবে নেয়া হয়েছে। এর আগে মাহিয়া মাহিকে নায়িকা করে বলিউডে ছবি তৈরির চেষ্টা করলেও সফল হয়নি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দুটি।বলে রাখা ভালো, নায়িকাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের নায়কদেরও পা পড়েছে বলিউডে। তাদের মধ্যে রিয়াজ ইংরেজি ভাষায় নির্মিত বলিউডের ‘ইট ওয়াজ রেইনিং দ্যাট নাইট’ নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ছবিতে তার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুস্মিতা সেন। তারও আগে নায়ক ফেরদৌস ২০০১ সালে ইকবাল দুড়ানি পরিচালিত ছবি ‘মিট্টি’তে অভিনয় করেন। ছবিটি ভারতে খুব জনপ্রিয় হয়। হিন্দির পাশাপাশি ছবিটি বেশ কিছু ভাষায় ডাবিং করে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে মুক্তি দেয়া হয়েছিলো।এলএ
Advertisement