বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি। তামিম ইকবাল ইংল্যান্ডে পুরো টুর্নামেন্টই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। সেই বাজে ফর্ম যেন শ্রীলঙ্কাতেও টেনে আনলেন দেশসেরা ওপেনার। প্রথমবারের মতো অধিনায়ক হয়ে খেলতে গেছেন। আর প্রথম ম্যাচেই ব্যাট করতে নেমে তামিম ফিরলেন শূন্যতে।
Advertisement
প্রথম ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৫ বল মোকাবেলা বিদায়ী পেসার লাসিথ মালিঙ্গার দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে মাটিতে পড়ে যান তামিম, তাকে ফাঁকি দিয়ে বল ভেঙে দেয় স্ট্যাম্প। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে এসেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১ উইকেটে ২ রান।
এর আগে সফরকারি দলের লাগামহীন বোলিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৮ উইকেটে ৩১৪ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। অর্থাৎ জিততে হলে ৩১৫ করতে হবে টাইগারদের।
লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় ওভারেই ওপেনার আভিশকা ফার্নান্দোর উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তিন বছর পর দলে ফেরা শফিউল ইসলামই প্রথম আঘাত হানেন।
Advertisement
২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে খেলা শফিউল ইসলামকে দিয়েই ইনিংসের শুরুটা করেন দেশের ইতিহাসের ১৪তম ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি ডানহাতি এই পেসার।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে জোরালো আপিল করেও পাননি লেগ বিফোর উইকেট। তবে পঞ্চম বলে অফস্ট্যাম্পের খানিক বাইরে করা বলে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন আভিশকাকে। আউট হওয়ার আগে ১৩ বল থেকে ৭ রান করেন ডানহাতি এ ওপেনার।
তবে ১০ রানে ১ উইকেট হারানোর পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে দিমুথ করুনারত্নে আর কুশল পেরেরা গড়েন ৯৭ রানের জুটি। মারমুখী এই জুটিটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৫তম ওভারের শেষ বলে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মোস্তাফিজুর রহমানের সহজ ক্যাচ হন লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নে। ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তিনি তখন ৩৬ রানে।
বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং আর দৃষ্টিকটু ফিল্ডিংয়ে তৃতীয় উইকেটে আরেকটি বড় জুটি গড়ে ফেলেন কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস। সৌম্য সরকারের করা ২৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মেন্ডিসকে যেভাবে জীবন দিয়েছেন, সেটা পাড়া মহল্লার ক্রিকেটেও সচরাচর দেখা যায় না।
Advertisement
২৮ রানে থাকা মেন্ডিস সৌম্যর বলটি তুলে দিয়েছিলেন লং অনে। দৌড়ে এসে সেটি হাতেই পান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তালুতে নিয়েও ক্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি।
এরই মধ্যে সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা। ২৮তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের প্রথম তিনটি বল ডট নেয়ার পর মিডউইকেট এলাকা দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই উদযাপনে মাতেন লঙ্কান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে তার লাগে মাত্র ৮২ বল।
তৃতীয় উইকেটে দুই পেরেরার ১০০ রানের থিতু জুটিটি অবশেষে ভাঙেন বিপদের বন্ধু 'পার্টটাইমার' সৌম্য সরকার। ডানহাতি এই পেসারকে শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে খেলতে গিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের সহজ ক্যাচ হন সেঞ্চুরিয়ান কুশল পেরেরা। ৯৯ বল মোকাবেলায় পেরেরা ১১১ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছিলেন ১৭টি বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায়।
পরের ওভারে এসে কুশল মেন্ডিসকে (৪৩) উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান রুবেল হোসেন। ২১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা।
তবে সেই চাপ সহজেই উৎড়ে গেছেন লাহিরু থিরিমান্নে আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ৬৩ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন তারা। ৪৫তম ওভারে এসে এই জুটিটা ভাঙেন মোস্তাফিজ। ২৫ করে থিরিমান্নে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন সৌম্যের হাতে।
পরের ওভারে ভয়ংকর থিসারা পেরেরাকে জায়গায় দাঁড়াতে দেননি শফিউল। টাইগার পেসারকে তুলে মারতে গিয়ে মাত্র ২ রানেই সৌম্যর ক্যাচ হন থিসারা। ইনিংসের ৯ বল বাকি থাকতে হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থাকা ম্যাথিউজকেও (৪৮) সাজঘরের পথ দেখান মোস্তাফিজ।
শেষ ১০ ওভারে মোটামুটি ভালো বল করেছে টাইগাররা। ফলে লঙ্কানরা যোগ করতে পারে মোটে ৬৯ রান, সঙ্গে বেশ কয়েকটি উইকেট হারানোয় রানটা প্রত্যাশিতভাবে বাড়েনি স্বাগতিকদের।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল শফিউল ইসলাম। ৬২ রানে পান ৩টি উইকেট। ২টি উইকেট শিকার মোস্তাফিজের। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন মিরাজ, রুবেল আর সৌম্য।
এমএমআর/এমকেএইচ