দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। এ সড়কে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৪টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশব্যাপী বয়ে যাওয়া অতি বৃষ্টির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ মহাসড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
Advertisement
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকাজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমছে। ফলে মহাসড়কটিতে চলাচলরত যানবাহন আর যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কায়ও বাড়ছে।
আরও পড়ুন>> বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ঈদের আগে মেরামতের নির্দেশ
Advertisement
এ সমস্যা নিরসনে মহাসড়কের মেরামত কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ। তবে ইটের জোড়াতালিতে চলছে মেরামত। কাজটি শুধুই ঈদ মৌসুমে কর্তৃপক্ষের টাকা লুটপাটের একটি তৎপরতা বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভোগান্তির শিকার পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা যায়, মহসড়কের এলেঙ্গা অংশের প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বড় বড় গর্ত। গর্তে পানি জমে যাচ্ছে। ফলে মহাসড়কের এ অংশে গতি হারাচ্ছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
দেখা গেছে, ইট দিয়ে গর্ত মেরামতের কাজ করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিকরা। যদিও গাড়ির চাকা অথবা বৃষ্টির পানিতে নিমিষেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব মেরামত।
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের চারদিকে গড়ে উঠেছে একাধিক ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জনবহুল এ বাসস্ট্যান্ড দিয়ে প্রতিদিন হেঁটে চলা হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে রূপ নিয়েছে।
Advertisement
আরও পড়ুন>> এবারও ৫ স্থান থেকে পাওয়া যাবে রেলের অগ্রিম টিকিট
ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হানিফ পরিবহনের বাসচালক কবির মিয়ার অভিযোগ, দেশের অন্যান্য মহাসড়কের কাজ দ্রুতগতিতে শেষ হলেও কাজের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এ মহাসড়কের কাজ শেষ হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহারে এ মহাসড়কটি করা হলেও লক্ষ্যণীয় গুরুত্বই দেখা যাচ্ছে না। মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে দুই এক দিন পরপরই দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন খানাখন্দ।
তিনি বলেন, মহাসড়কে অতি ব্যস্ততম এলেঙ্গার প্রায় ২০০ মিটার এলাকায় সৃষ্ট ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত পরিবহন সংশ্লিষ্টদের জীবনমরণ সমস্যা কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাঁদা ও খানাখন্দের ফলে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থামানোর মতো কোনো অবস্থায়ই নেই।
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এই অল্প জায়গার জন্য আমাদের প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বর্ষায় কাঁদা আর শুষ্ক মৌসুমের ধুলায় আমাদের জীবন আর জীবিকা নির্বাহ প্রায় বিপন্ন হতে বসেছে। এরপরও দুই দিন পরপর মহাসড়কে সৃষ্ট ভাঙন আর গর্ত মেরামতে লোক দেখানো ইট দিয়ে জোড়াতালির কাজ করা হচ্ছে, যা কয়েকদিনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই ভোগান্তির কোনো স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। এভাবে দেশের টাকা বিনষ্টের জোড়াতালির কাজ বন্ধ করে, স্থায়ী মেরামত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন>> ঈদে ১০ দিন সিএনজি স্টেশন খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে দায়িত্বরত টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই রফিকুল ইসলাম জানান, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৫ হাজার ছোটবড় যানবাহন চলাচল করে। তবে এই খানাখন্দের জন্যে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনগুলো আসার পর একেবারে গতি কমিয়ে পারাপার হচ্ছে। এ কারণে সারিবদ্ধ পরিবহনে প্রায়ই সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দ্রুত ওই যানজট নিরসনে যেমন বেড়েছে তাদের ভোগান্তি, তেমনি ওই ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
তিনি জানান, এ মহাসড়কের ডিউটি ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের খুবই কষ্ট করতে হচ্ছে। অতি দ্রুতই মহাসড়কের সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নূর এ আলম সিদ্দিকী জানান, মহাসড়কের প্রবেশদ্বার এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের এ সমস্যার কথা টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের একাধিক মিটিংয়ে বলেছি। মিটিং পরবর্তী সময়ে শুধু নিম্নমানের দায়সারা কাজ করার দায়িত্ব পালন করেছে সড়ক বিভাগ। তবে সঠিক কোনো সমাধান আসেনি। এ ক্ষেত্রে বলাই চলে জনগণের ভোগান্তিতে সড়ক বিভাগ কর্মকর্তাদের কি কোনো কষ্ট আছে?
আরও পড়ুন>> নৌপথে ঈদযাত্রা বিঘ্নিতের শঙ্কা
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান জানান, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে সৃষ্ট হওয়া গর্ত সাময়িকভাবে ইট দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। যাতে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। তবে এ সমস্যা নিরসনে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ৩০০ মিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ খুব দ্রুতই শুরু হচ্ছে।
আরিফ উর রহমান টগর/জেডএ/এমকেএইচ