মানবপাচার চক্রের এক সদস্যকে আটকের পর কৌশলে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিবাকর চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে।
Advertisement
প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট দেশ ভানুয়াতুতে দেড় থেকে দুই বছর আটক থাকার পর দেশে ফিরে মানবপাচার চক্রের সদস্য শামসুল হককে ধরে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন পাচারের শিকার কয়েকজন যুবক। তবে বাবুগঞ্জ থানার ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস তাকে কৌশলে ছেড়ে দেন বলে তাদের অভিযোগ।
পাচারের শিকার কয়েকজন যুবক ও তাদের স্বজনরা জানান, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মুন্ডপাশা, জয়শ্রী, পূর্ব মুন্ডপাশা, শিকারপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যুবকরা দেশে ব্যবসা করে বা অন্যান্য কাজ করে মোটামুটি ভালো ছিলেন। তাদের অস্ট্রেলিয়া ও কিউবায় উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান বরিশালের বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠীর হারুন-অর-রশিদ হাওলাদারের ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পলাশ হাওলাদার, তার বড় ভাই এনামুল মাস্টার ও জসিম উদ্দিন।
এছাড়া মানবপাচারের কাজে তাদের সহায়তা ও লোক সংগ্রহ করতেন জসিম উদ্দিনের স্ত্রী যুথী আক্তার ও শ্বশুর শামসুল হক। এই চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে বরিশাল অঞ্চলের ২৬ জনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোট ১০১ জন যুবক সাড়ে ১১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৯ লাখ পর্যন্ত টাকা দেয়। ১০১ জনের কাছ থেকে মোট সাড়ে ১৭ কোটি টাকা নেয় জসিম, তার স্ত্রী ও শ্বশুর। এরপর প্রশান্ত মহাসাগরীয় ছোট দেশ ভানুয়াতুতে নিয়ে তাদের আটকে রাখা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন>> মানবপাচার : জামালের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলেই মিলতো মুক্তি
প্রতারণার শিকার উজিরপুরের মুঙ্গাকাঠী গ্রামের ফরহাদ হোসেন বলেন, দেশে তিনি বাবার ব্যবসা পরিচালনা করতেন। অস্ট্রেলিয়া ও কিউবায় খাওয়া-দাওয়া ফ্রি, মাসে ৫০ হাজার বেতন, ২ বছরের মধ্যে ওই দেশের পাসপোর্ট করে দেয়াসহ উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান জসিম উদ্দিন, তার স্ত্রী যুথী আক্তার ও শ্বশুর শামসুল হক। তাদের বিশ্বাস করে বরিশাল অঞ্চলের ২৬ জন বিদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এভাবে চক্রটির প্রলোভনে পড়ে বরিশাল অঞ্চলের মোট ১০১ জন বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দলে ভাগ করে ১০১ যুবককে ভারত সিঙ্গাপুর, ফিজি হয়ে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুর রাজধানী পোর্টভিলায় নিয়ে আটকে রাখে প্রতারকরা। অভুক্ত রেখে নির্যাতনও করা হতো তাদের। গত বছরের ২০ নভেম্বর সকালে তাদের উদ্ধার করে ভানুয়াতু সিআইডি। পরে আইওএম’র সহায়তায় গত ২০ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত দেশে ফিরে আসে প্রতারণার শিকার ৭৫ যুবক। এখনও সেখানে ২৬ জন আছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অসুস্থ।
আরেক যুবক আমির হোসেন জানান, জমি বিক্রি ও ধার-দেনা করে জসিমের শ্বশুর কাজী শামসুল হকের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলাম। এভাবে অনেকেই তাদের প্রায় সবকিছু বিক্রি করে শামসুল হকের হাতে টাকা তুলে দেন। তাই দেশে ফিরে এসে প্রতারণার শিকার যুবকরা জসিম উদ্দিন, যুথী আক্তার ও শামসুল হককে খুঁজতে থাকে। গত ২১ জুলাই জসিমের শ্বশুর শামসুল হককে তার জামাতার বাড়ি বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠী পেয়ে অবরুদ্ধ করেন তারা।
Advertisement
ওইদিন সন্ধ্যায় কৌশলে তাকে প্রতারণার শিকার যুবকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন বাবুগঞ্জ থানার ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস। থানায় নিয়ে এসে ওসি উল্টো ওই যুবকদের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলার ভয় দেখান বলেন জানান আমির হোসেন।
আরও পড়ুন>> ভাঙারি ব্যবসার আড়ালে মানবপাচার করতো লিটন
উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর এলাকার জিয়াউল খান জানান, ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস প্রতারক শামসুল হকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। এরপর তিন উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আগামী ৫ আগস্ট শালিস বৈঠকে কথা বলে কৌশলে তাকে চলে যেতে সহায়তা করেন।
উপজেলার মুন্ডপাশা এলাকার মো. ইমরান বলেন, মানবপাচার ও প্রতারণার অভিযোগে বরিশাল মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর এবং টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায় জসিম ও তার অন্যান্য সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ ওই মামলায় শামসুল হককে অভিযুক্ত করতে পারতেন। কিন্তু শামসুল হককে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ওসি দিবাকর চন্দ্র দাস বলেন, একজন লোককে আটকে রাখার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং বিদেশ ফেরত ওই যুবকদের হাত থেকে শামসুল হককে উদ্ধার করে। পরে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রতারণার শিকার যুবকরা মামলা নয়, আপোষ চাচ্ছেন। এ কারণে আগামী ৫ আগস্ট সংশ্লিষ্ট তিন উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে শালিস বৈঠকের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
সাইফ আমীন/এমএসএইচ/এমএস