জাতীয়

মানুষের চাপে বাসার বাইরে যেতে যুদ্ধ করতে হয়

বাসায় অযথাই রাজনৈতিক কর্মী ও সামাজিক নেতাদের উপস্থিতি নিজের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, ‘আমার বাসা থেকে বের হওয়া যুদ্ধের মতো। আমি কোনোভাবে বাসা থেকে বের হতে পারি না, কোনো ভাবেই পারি না।’

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে নগরের রীমা কনভেনশন সেন্টারে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান হয়। এতে জামালখান ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনি সেনগুপ্তা নামের এক নারীর অভিযোগের জবাবে মেয়র এসব কথা বলেন।

সিটি মেয়র বলেন, ‘আমার কাছে যত সহজে মানুষ যেতে পারে, আমার দেখায় এত সহজে কোনো নেতার কাছে যাওয়া যায় না। আমিওতো এক সময় ছাত্র রাজনীতি করেছি, ছাত্রজীবনে অনেক বড় বড় নেতার সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।’

অহেতুক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে বিরক্ত এ নগরপিতা বলেন, ‘আমরা যখন ছাত্র রাজনীতি করতাম তখন কিন্তু অহেতুক-অকারণে-অপ্রয়োজনে নেতারা কাছে যেতাম না। তখন মনে করতাম নেতার সময়ের মূল্য আছে। আমি প্রয়োজন না হলে কেন যাব? এখন রাজনৈতিক বলেন, সামাজিক নেতা বলেন বা নগরবাসী বলেন বিভিন্ন জন বিভিন্ন কারণে আমার বাসায় যায়।’

Advertisement

‘আজকে আমার খারাপ লাগে, এখন আমি মনে করি আমার বাসা থেকে বের হওয়া যুদ্ধের মতো। আমি কোনো ভাবে বাসা থেকে বের হতে পারি না, কোনো ভাবেই পারি না। আমার বাসার ড্রয়িংরুম ভর্তি, যেখানে ৬০-৭০ জন বসার ব্যবস্থা আছে। ভেতরে একটা রুম আছে সেটাও ভর্তি থাকে। এর বাইরেও মানুষ দাঁড়িয়ে থাকেন। এর বাইরে করিডোর থাকে। নিচের ওই করিডোরেও লোক দাঁড়িয়ে থাকে। যাতে আমি যাওয়ার সময় আমার সঙ্গে কথা বলতে পারে। অর্থাৎ প্রতিদিনই সকাল বেলা কয়েকশ’ লোক আমার বাড়িতে অবস্থান নেয়। এর বাইরে আবার অনেকে অপেক্ষায় থাকে আমি কখন আসি,’বলেন সিটি মেয়র।

মেয়র তার সময়ের মূল্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনাদের বুঝতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়রের নির্ধারীত কিছু দায়িত্ব আছে। এসব কাজ যদি যথা সময়ে করা হয়, তাহলে সিটি কর্পোরেশনের কাজের মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। দায়িত্বের বাহিরেও আমি যতটুকু পারছি আপনাদের সময় দিচ্ছি। অনেকে এমন সব আবদার নিয়ে আসে যা আমার আওয়াতার বাইরে।’

জলাবদ্ধতা নিরসন অনেক চ্যালেঞ্জিং জানিয়ে সিটি মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চীনা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ২০১৬ সালে ১১ মাস ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছিল বিশেষজ্ঞরা। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে জমা দেই। তখন জানতে পারি সিডিএর মেগাপ্রকল্প একনেকে উঠছে। আমরা এর বিরোধিতা করেনি, শতভাগ সহযোগিতার সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছিলাম। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষে ১৩টি খালের ড্রয়িং ডিজাইন কয়েকদিন আগে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ডেঙ্গু প্রতিরোধ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘চসিক নিয়মিত ওষুধ ছিটানো, ডোর টু ডোর ময়লা সংগ্রহ এবং রাতে ময়লা অপসারণ করায় অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে মশা কম, ডেঙ্গুর প্রকোপও কম। প্রতি ওয়ার্ডে ফগার ও হ্যান্ড স্প্রে মেশিনে ১৬১ জন ওষুধ ছিটাচ্ছেন। ডাক্তারদের সচেতন করেছি। নগরবাসীর অবগতির জন্য বিজ্ঞপ্তি, প্রচারপত্র বিলি করছি। ডেঙ্গু আক্রান্ত কেউ যদি চিকিৎসা করাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তবে আমরা দায়িত্ব নেব।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও নিরাপদ যাত্রীসেবার লক্ষ্যে ১০০ এসি বাস নামানোর জন্য একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে রাজি করিয়েছি। তারা এলসি খুলেছে। বিআরটিএ, সিএমপিকে অনুরোধ জানিয়েছি দ্রুত অনুমোদন দেয়ার জন্য।’

নগরবাসীর উদ্দেশে সিটি মেয়র বলেন, ‘নিরাপদ, বাসযোগ্য, পরিষ্কার ও সবুজ নগরী হিসেবে ক্রমে চট্টগ্রামে দৃশ্যমান হচ্ছে। এ কাজে নগরবাসীকে আমাদের সঙ্গে পেতে চাই। জোর করে চাপিয়ে দিলে টেকসই হয় না। তাই ধীরগতিতে এগোচ্ছি আমরা। আমার প্রত্যাশা উন্নত দেশের সমৃদ্ধ নগরের মতো চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব।’

আবু আজাদ/এনডিএস/পিআর