ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে আবারও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নতুন করে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষ।
Advertisement
ধরলা নদীতে নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে আবারও বাঁধে, উঁচু বাড়িতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে বন্যাকবলিতরা। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, ছাটকালুয়া, চর হলোখা, বারোঘরিয়া, আঠারোঘরিয়া, মাস্টারের হাট গ্রাম, পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপা ও চর ভেলাকোপা, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নন্দদুলারের ভিটা, মাধবরাম, সর্দারপাড়া, পাছগাছী ইউনিয়নের দক্ষিণ নওয়াবশ, কদমতলা, চৌধুরীপাড়া, মোগলবাসা ইউনিয়নের চর সিতাইঝাড়, মুন্সিপাড়া, তেলীপাড়া, গাড়িয়ালপাড়া, বালাবাড়ীসহ প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের মানুষ আবারও দুর্ভোগে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম শহরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টি-বাঁধে আশ্রয় নেয়া মশিউর, কামাল ও আঞ্জুয়ারা বলেন, পরশু দিন পানি নেমে গিয়েছিল। আমরাও উঠান ও আশপাশ ঝাড়ু দিয়েছি বাড়িতে ওঠার জন্য। গতকাল (বুধবার) থেকে আবারও হু হু করে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে। আবার সবাই এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি।
সদর উপজেলার মাধবরাম এলাকার নজির, মহুবর ও দানেশ বলেন, মানুষের খাবার তো শেষ। সেই সঙ্গে গরু-বাছুরের খাবার জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক আঁটি খড়ের মূল্য ১০ টাকায় চলে গেছে। নিজেরা কী খাব আর গরুকেই বা কী খাওয়াবো। খুব সমস্যায় আছি আমরা।
Advertisement
বন্যা আর বৃষ্টিতে কাহিল ধরলা ব্রিজের পূর্বদিকে আশ্রয় নেয়া শেফালী বলেন, ‘বৃষ্টির জন্যে খোলা আকাশে রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না। রেড ক্রিসেন্ট থাকি তাঁবু পাইছি। রাতে বৃষ্টির ফলে তাঁবু দিয়ে পানি পড়ায় সারারাত জাগি আছলাম।’ একই অবস্থা এখানে আশ্রয় নেয়া অর্ধশতাধিক মানুষের।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানিও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। পানির প্রবল চাপে বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা শহরে আবারও পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে সদর উপজেলা।
এদিকে বন্যদুর্গত এলাকা পরিদর্শনে বৃহস্পতিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও সিনিয়র সচিব শাহ কামাল কুড়িগ্রামে আসেন। দুপুরে তারা কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউজ কনফারেন্স কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশ নেন। পরে চিলমারী উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকা পরির্দশন ও দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, জেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। বিভিন্ন দফতরগুলো সার্বক্ষণিকভাবে বন্যা মনিটরিং করছে। আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বন্যাকবলিতদের ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এখানকার মানুষ খুব দ্রুতই এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Advertisement
নাজমুল হোসাইন/আরএআর/পিআর