দেশজুড়ে

আবারও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র-ঘাঘটের পানি

উজান থেকে নেমে আসা পানি ও দুদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি পুনরায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে ইতোপূর্বে বন্যাকবলিত যেসব এলাকা থেকে পানি সরে গিয়েছিল সেসব এলাকাসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়ে আরও দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।

Advertisement

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গত ১৫ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এখনও অনেকের ঘরবাড়িতে পানি রয়েছে। তাই বাঁধসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত বানভাসি লোকজন এখনও ঘরে ফিরে যেতে পারছে না। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট হয়েছে। ফলে পানিবন্দি মানুষদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে বাঙালি ও করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ কয়েকটি গ্রামে নতুন করে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গাইবান্ধা পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট, বসতবাড়ি আবারও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই, চকমামরোজপুর, কাজীপাড়া, বাহারবন পশ্চিমপাড়া, সরকারপাড়ার কিছু অংশ এবং ডেভিড কোম্পানিপাড়ার পশ্চিম অংশে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisement

অপরদিকে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়নের থৈকরের পাড়া, আমদিরপাড়া, বাদিনারপাড়া মেছট এবং কামালেরপাড়া ইউনিয়নের শাহবাজেরপাড়া, হাসিলকান্দি, ছিলমানেরপাড়া, গড়গরিয়াব, ভগবানপুর, ফলিয়াসহ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত রেললাইনে বন্যার পানি সরে না যাওয়া সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ত্রিমোহিনী রেলস্টেশন থেকে বাদিয়াখালী রেলস্টেশন পর্যন্ত একাধিক পয়েন্টে রেললাইনের নিচের মাটি বন্যার পানিতে ধুয়ে গেছে এবং এ সমস্ত এলাকায় রেললাইন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। তাই আটদিন যাবত লালমনিরহাট-সান্তাহার সকল রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় ১২ হাজার ৮০৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে আছে। এর মধ্যে রোপা আউশ ৯৭৭ হেক্টর, পাট ২ হাজার ৪৩৯ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ৪৬১ হেক্টর, বিভিন্ন ধরনের সবজি ২৪৭ হেক্টর, পান ৩ হেক্টর, তিল ২৫ হেক্টর এবং অন্যান্য ফসল ৪ হাজার ১৫২ হেক্টর।

জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন জাগো নিউজকে জানান, বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ৬৯ হাজার ৮৭০টি ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি।

Advertisement

তিনি আরও জানান, এবারের বন্যায় জেলার ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন বীজতলা, রোপা আমন, পাট ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ১টি গরু, ৩ হাজার ৭২০টি হাঁস-মুরগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ১৫০ মে. টন চাল, ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৬ হাজার শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জাহিদ খন্দকার/এমবিআর/এমএস