উজানে নদ-নদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ সদরের জেলখানার চর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবল স্রোতের তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আকস্মিক ভাঙন দেখা দেয়। বাঁধের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ মিটার ভেঙে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে যাচ্ছে সদর উপজেলার চর জেলাখানা, চর গোবিন্দপুর, দুর্গাপুর, বারেরচর, চরসিরতা ও চরহাসাদিয়াসহ জনবসতিপূর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েকশ ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, আমন ধানের বীজতলা ও কয়েকটি মাছের খামার। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি অংশ।
Advertisement
খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক একেএম গালিভ খাঁন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে গর্ত থেকে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করছেন জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বাঁধটি নিয়ন্ত্রণে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তারা। বাঁধটির অন্যান্য অংশে নতুন করে যাতে আর ভাঙন দেখা দিতে না পারে সেই লক্ষে কাজ চলছে বলে জানান তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে প্রায় ২৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২০০১ সালে নির্মাণ করা হয় বাঁধটি। এরপর বড় ধরনের বন্যা বা পানির চাপ না থাকায় ওই বাঁধে আর সংস্কার করা হয়নি। প্রতি বছরই বন্যা শুরুর আগে বাঁধের ডেঞ্জার পয়েন্টগুলোতে কিছু না কিছু কাজ করা হয়। এবার পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানির চাপ বেশি থাকায় বাঁধের পাড়ে লাগানো গাছের শিকর দিয়ে অথবা ইঁদুরের গর্তে পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে বৃহস্পতিবার থেকে বালুর বস্তা ফেলা হবে। তবে সময় যত যাচ্ছে বাঁধের ভাঙন এলাকা ততই বিস্তৃত হচ্ছে।
Advertisement
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, বাঁধটির অন্যান্য অংশে নতুন করে যাতে আর ভাঙন দেখা দিতে না পারে সেই লক্ষে কাজ চলছে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নেও কাজ করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বাঁধটি নির্মাণের পর আর সংস্কার করা হয়নি। প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে বাঁধের কোথাও না কোথাও ভাঙন দেখা দেয়। এবার বড় ধরনের বন্যার কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং স্রোতের কারণে বাঁধটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তারা আরও জানান, বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় বিকেল পর্যন্ত চরাঞ্চলের প্রায় ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে সদর উপজেলার চর জেলাখানা, চর গোবিন্দপুর, দুর্গাপুর, বারেরচর, চরসিরতা ও চরহাসাদিয়া গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। জনবসতিপূর্ণ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েকশ ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, আমন ধানের বীজতলা ও কয়েকটি মাছের খামার তলিয়ে গেছে। বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। আকস্মিক পানি ঢুকে পড়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। ইতোমধ্যেই বসতভিটা ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে অসংখ্য পরিবার। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে আশপাশের আরও বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হবে।
রকিবুল হাসান রুবেল/আরএআর/এমএস
Advertisement