দেশজুড়ে

নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে খালে বোরকা ফেলে দেয় জোবায়ের

ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় আরও ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।

Advertisement

বুধবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে সোনাগাজী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, উপাধ্যক্ষ রেজা মো. এনামুল হক চৌধুরী, স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম হাফেজ মোবারক হোসেন, মো. ইব্রাহিম, দোকানি মো. নুর উদ্দিন ও আকরাম হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হয়।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় আজ বুধবার ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে মামলার ৪৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলো। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আরও চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করার কথা রয়েছে। এরা হলেন এমদাদ হোসেন পিংকেল, মো. শাহজাহান, মো. আবুল কাশেম ও মো. সেলিমুর রেজা।

তিনি আরও বলেন, ৬ এপ্রিল ঘটনার দিন অর্থাৎ সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নুসরাত কিলিং মিশনে জোবায়েরের ব্যবহৃত বোরকা পুলিশ জব্দ করেছিল তা সাক্ষীরা আজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন। পুলিশ ওই বোরকা খাল থেকে জব্দ করার বিষয়ে সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দেন।

Advertisement

আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মো. ইব্রাহিম বলেন, ২০ এপ্রিল দুপুরে আমি সোনাগাজী সরকারি কলেজের কাছে ডাঙ্গি খালের পাশ দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে পিবিআইয়ের একটি দলকে খালের পাশে দেখি। তাদের সঙ্গে মামলার আসামি সাইফুল ইসলাম জোবায়ের ছিল। পিবিআই কর্মকর্তারা আমাকে বলেন, খালে একটি বোরকা রয়েছে। আপনাকে একটু নামতে হবে। পরে আমি তল্লাশি চালিয়ে সোনাগাজী-দাসেরহাট সড়কের গোলাম সরোয়ার মানিকের বাড়ির কাছে খালের অংশ থেকে একটি কালো রঙের বোরকা উদ্ধার করি। এসময় জোবায়ের জানায়, সেদিন আগুন দিয়ে পালানোর সময় সে তার ব্যবহৃত বোরকা খালের এ অংশে ফেলে পালিয়ে যায়।

মামলার অপর সাক্ষী অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন চৌধুরী ও উপাধ্যক্ষ রেজা মো. এনামুল হক চৌধুরি জানান, তারা সেদিন বোরকা উদ্ধারের সময় সেখানে ছিলেন এবং পিবিআই জব্দ তালিকা তৈরি করলে তারা তাতে স্বাক্ষর করেন।

সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সোনাগাজীর ভুঞা বাজারের দোকানি মো. নুর উদ্দিন বলেন, ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় পিবিআই মামলার আসামি শাহাদাত হোসেন শামীমকে নিয়ে আসেন এবং মুদি দোকানি লিটনের দোকানে যান। তারা সেখান থেকে মাঝারি আকারের পুরাতন একটি প্লাস্টিকের চোঙা, হাতলযুক্ত টিনের পাত্র, কালো পলিথিন, কেরোসিন মাপার পাত্র ও কেরোসিন রাখার ড্রাম জব্দ করেন। আমি জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি।

এর আগে গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। পরে রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা, মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিন, নৈশ প্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন, দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদ, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান, জহিরুল ইসলাম, হল পরিদর্শক বেলায়েত হোসেন, নুসরাতের মা শিরিন আখতার, শিক্ষক আবুল খায়ের, মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন, সোনাগাজী মাদরাসার দফতরি মো. ইউসুফ, সোনাগাজী মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসাইন, সোনাগাজী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিন, অ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুল করিম, সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব মাওলানা নুরুল আফসার ফারুকী, সোনাগাজী মাদরাসার ছাত্রী তানজিনা বেগম সাথী, মাদরাসা ছাত্রী বিবি জাহেদা বেগম তামান্না, মাদরাসার বাংলা বিভাগের প্রভাষক খুজিস্তা খানম, আয়া বেবী রাণী দাস, সহপাঠী আকলিমা আক্তার, কায়সার মাহমুদ, মাদরাসার ছাত্রী ফাহমিদা আক্তার হামদুনা, নাসরিন সুলতানা, হল পরিদর্শক কবির আহম্মদ, তাহমিনা আক্তার, বিবি হাজেরা, আবু বকর সিদ্দিক ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. আকবর হোসেন, ফজলুল করিম, রাবেয়া আক্তার, মোয়াজ্জেম হোসেন, জাফর ইকবাল, প্রফেসর মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী, হাফেজ মোবারক হোসেন, মো. ইব্রাহীম, রেজা মো. এনামুল হক, মো. নুর উদ্দিন, আকরাম হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।

Advertisement

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বেচ্চ শাস্তির সুপারিশ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

রাশেদুল হাসান/এমবিআর/এমএস