অর্থনীতি

কৃষি ঋণে ১২০ শতাংশ সুদ নেয় এনজিও!

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রায় ৬১ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ হয় বিভিন্ন এনজিও ও ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। যেখানে ঋণের সুদহার ২৫-১২০ শতাংশ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। এ অবস্থা চলতে থাকলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব নয়।

Advertisement

বুধবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইমপ্যাক্ট অব ব্যাংক বেজড রুরাল অ্যান্ড আরবান ফাইন্যান্সিং অন ইকোনমিক গ্রোথ অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম’র নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান।

তারা বলেন, কৃষি ঋণ বিতরণে বেসরকারি সংস্থার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ব্যাংকিং অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে গতানুগতিক নয়, কৃষিভিত্তিক নতুন পণ্যে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল মোস্তফা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকের একটি বড় অংশ অর্থায়ন হয় গতানুগতিক পণ্যে। এর পরিবর্তে কৃষিভিত্তিক নতুন পণ্যে অর্থায়ন করলে ঋণ খেলাপির আশঙ্কা কম। এর মধ্যে রয়েছে কুমির, কাঁকড়া চাষ, কচ্ছপ, কেঁচো, উটপাখি, সাপের বিষ এবং ব্যাঙের পা, যা এরই মধ্যে বিদেশে রফতানি হচ্ছে এবং খামারিরা লাভবান হয়েছেন।

Advertisement

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীব, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের মহাপরিচালক মুহা. নাজিমুদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক।

ডেপুটি গভর্নর মনিরুজ্জামান বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ঋণের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থায়ন প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই মধ্যে কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে এরই মধ্যে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য নতুন নতুন প্রস্তাব আসছে, যা যাচাই-বাছাই চলছে।

ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, কৃষি এবং এসএমই খাতে বেশি অর্থায়ন করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে এসব খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, গ্রামীণ এবং শহর অর্থায়নের মধ্যে ওভারলেপিং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের কৃষিভিত্তিক পদক্ষেপে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। এ কারণে বিদেশি ব্যাংকও গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিং এবং ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Advertisement

কৃষি ব্যাংকের এমডি আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে গ্রামীণ জনপদের অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গ্রামে ৩৯ শতাংশ ঋণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হয়। বাকি ঋণ বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ হয় যার সুদ ২৫-১২০ শতাংশ। গ্রামীণ এবং শহরের মানুষের মধ্যে ঋণ বিতরণ করে এসডিজি বাস্তবায়ন আরও সহজ হবে।

ড. মাহফুজুল হক গ্রামীণ জনপদে আরও বেশি ব্যাংকিং কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

এসআই/এএইচ/এমএস