শিক্ষা

আইডিয়ালে টিউশন ফি পরিশোধে অভিভাবকদের ভোগান্তি

রাজধানীর সুনামধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায়ের নামে অভিভাবকদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ক্যাম্পাসের ভেতর মাসে তিন দিন হাতে-কাগজে টিউশন ফি জমা নেয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে টিউশন ফি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অনেককে ফিরে যেতে হয় বলেও অভিভাবকদের অভিযোগ।

Advertisement

একাধিক অভিভাবক জানান, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে পুরনো পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি আদায় করা হয়। প্রতিষ্ঠানের তিনটি শাখায় ক্যাম্পাসের ভেতরের নির্ধারিত কক্ষে বেতন আদায় করা হয়। প্রতিমাসের ৫, ১৫ ও ২৫ তারিখে অভিভাবকদের সারিবদ্ধ হয়ে দীর্ঘসময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে বেতন পরিশোধ করতে হয়। সন্তানের টিউশন ফি পরিশোধ করতে গিয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষার ফলে অনেকের নির্ধারিত সময়ে অফিসে যাওয়া, ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিজেদের প্রয়োজনীয় কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটেছে। তীব্র রোদ-বৃষ্টির মধ্যেই তাদের নির্ধারিত এই তিন দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে টিউশন পরিশোধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অনেকে আবার নানা বিড়ম্বনার কারণে বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পরে জরিমানাসহ এ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।

অভিভাবকরা আরও জানান, ব্যস্ততার কারণে যদি নির্ধারিত তিন দিনের মধ্যে টিউশন ফি পরিশোধ করা সম্ভব না হয়, তাহলে প্রতিদিন ১০ টাকা করে জরিমানা গুনতে হয়। এ কারণে দুর্যোগ আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মাসের ৫, ১৫ ও ২৫ তারিখে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সন্তানদের টিউশন ফি দিতে হচ্ছে তাদের। ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় কার্যক্রম চালু করতে কর্তৃপক্ষকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল, মুগদা ও বনশ্রীতে মোট তিনটি শাখা রয়েছে। মতিঝিল তাদের মূল ক্যাম্পাস হিসেবে পরিচিত। এ তিন শাখার দিবা-প্রভাতি শাখায় বাংলা, ইংলিশ ভার্সন ও কলেজ পর্যায়ে ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রথম থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা ও কলেজ পর্যায়ে মাসিক ২ হাজার ১০০ টাকা টিউশন ফি আদায় করা হয়। প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীকে অগ্রীম তিন মাসের টিউশন ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে। মূল ক্যাম্পাসের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক থাকলেও লাইনে দাঁড় করে এ অর্থ আদায় করা হয়।

Advertisement

এ বিষয়ে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের মূল ক্যাম্পাস সীমানায় অগ্রণী ব্যাংকের শাখা খোলা হলেও অভিভাবকদের লাইনে দাঁড় করিয়ে বেতন আদায় করা হয়। টিউশন ফি কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করতে ২০০৮ সাল থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করা হলেও তারা আমলে নেয়নি। করছি, করব বলে তা আর বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয় সীমানার মধ্যে ব্যাংক করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে অথচ ব্যাংকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি আদায় কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে না। সরকারকে ট্যাক্স-ভ্যাট ফাঁকি দিতেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অর্থ লেনদেন করতে আগ্রহী হচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ কারণে অভিভাবকদের ভোগান্তি দিয়ে পুরনো পদ্ধতিতে হাতে-কাগজে তা করা হচ্ছে।’

এ অভিভাবক নেতা আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান উচ্চহারে টিউশন ফি আদায় করছে। একজন শিক্ষার্থী একদিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা গুনতে হয়। কারণে-অকারণে টিউশন ফি বৃদ্ধি করা হয়। ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে কী পরিমাণে অর্থ আদায় করা হচ্ছে তা কখনো প্রকাশ করা হয় না। এটি মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে।’

টিউশন ফি পরিশোধ করতে এসে অভিভাবকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘টিউশন ফিসহ সকল অর্থ লেনদেন কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী জানুয়ারি থেকে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত রেজুলেশন তৈরি করে সভায় তা অনুমোদন করা হয়েছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল ক্যাম্পাসের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তার ভিত্তিতে এ ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইন লেনদেন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ জন্য আমাদের সকল শিক্ষার্থীদের নথি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এসব নথি ব্যাংকের সার্ভারে ডাটাভুক্ত হওয়ার পর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে টিউশনসহ সকল লেনদেন কার্যক্রম ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন কার্যক্রম করতে নির্দেশ দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ কার্যক্রম চালু হলে অভিভাবকরা তাদের সুবিধামতো বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারবেন। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তা অগ্রণী ব্যাংকে জমা হবে। মাস শেষে সেই অর্থ প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হবে।’

এমএইচএম/এসআর/এমএস