ফেনীতে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। গত ২০ দিনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৭ রোগী। এ হাসপাতালে এখনও ৭ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের সবাই ঢাকায় অবস্থান করার কারণে শরীরে এডিস মশার জীবাণু নিয়ে এসেছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এদিকে গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
Advertisement
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এডিস মশার জীবাণু নিয়ে ১৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে ৮ জন সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করলেও বাকি দুইজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরাতন ভবনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দা-করিডোর, বিশেষ বেড ও কেবিনে ডেঙ্গু আক্রন্ত হয়ে মহিউদ্দিন (৩০), আরাফাত রহমান (২৩), তাফহিমুল সাওয়ারি ইলেন (১৮), কাজী নজরুল ইসলাম আকাশ (১৮), মো. শরীফ (২৫), নোবেল চন্দ্র দাস (২৩) ও অনিক চন্দ্র দাস (২০) চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসাধীন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মালিপাথর এলাকার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক মো. শরীফ জানান, গত সাপ্তাহে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মাকে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যান। সেখানে চার দিন অবস্থান করে বাড়ি ফিরলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তার শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু আছে বলে জানান।
Advertisement
একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে ঢাকায় অবস্থান করে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়ি চলে যান তাফহিমুল সাওয়ারি ইলেন (১৮), ফেনী শহরে থাকা নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার অনিক চন্দ্র দাস (২০), ঢাকার ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া এলাকার আরাফাত রহমান (২৩), একই ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও ফেনী শহরের তুলাবাড়িয়া এলাকার নোবেল চন্দ্র দাস (২৩)।
সোনাগাজী উপজেলার সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী নজরুল ইসলাম আকাশ (১৩) ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। এছাড়া হাসপাতালে মহিউদ্দিন (৩০) নামে এক রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভর্তি হন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, গত কয়েকদিনে হাসপাতালে ডেঙ্গুর জীবানু নিয়ে ১৭ জন ভর্তি হয়েছেন। অনেকে সুস্থ হয়ে ফিরে গেলেও বর্তমানে ৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. নেয়াতুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত ফেনীতে কোনো এডিস মশার জীবাণু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। এখানে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে এ জীবাণু নিয়ে আসছেন।
Advertisement
এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রোগীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিধান চন্দ্র সেন গুপ্ত জানান, পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা জন্ম নেয়। বিশেষ করে ফুলের টব, ডাবের খোসা, এসির পানিতে এ মশা জন্ম নিতে পারে। তাই এগুলো সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড় দিলে সে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াতে পারে। এজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
রাশেদুল হাসান/এফএ/জেআইএম