জুলাই মাসের প্রথম দিন ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২২ জন। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) পর্যন্ত এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড।
Advertisement
বিশেষ করে কত ৪-৫ দিন যাবত আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মাস শেষ হতে আরও 8 দিন বাকি থাকলেও জুন মাসের তুলনায় এ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ইন কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে আজ (মঙ্গলবার) ২৩ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৭ হাজার ৭৬৬ জন ভর্তি হন। তার মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৯ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে’তে ১৮৪ জন, জুনে ১ হাজার ৮১৪ জন ও ২৩ জুলাই পর্যন্ত ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৩৭ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৫ জন। তার মধ্যে এপ্রিলে ২ জন, জুনে ২ জন ও জুলাই ১ জন মারা গেছেন। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৬ গুণেরও বেশি।
Advertisement
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৪ জন ভর্তি হন। এছাড়া মিটফোর্ডে ৫১৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের ২২৭ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫২৮ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ৫৮৫ জন, বারডেম হাসপাতালে ১৩০ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৪৫ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০৯ জন, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানা ঢাকায় ১৭৬ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৪১ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৪৮ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৯০২ জন, ঢাকা বিভাগে ৭৩০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১ জন, খুলনা বিভাগে ৪৮ জন ও বরিশাল বিভাগে 8 জন ভর্তি হন।
তাদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে ইতোমধ্যেই বাড়ি ফিরে গেছেন ৫ হাজার ৯৩৮ জন। বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন বাংলাদেশ মেডিকেলে ৩১৩ জন, ইবনে সিনা ২৪০ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৩০৯ জন, ধানমন্ডি কমফোর্ট নার্সিংয়ে ৪ জন, পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালের ৫৪ জন, ল্যাবএইড হাসপাতালে ৪ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এ ৬৪১ জন, গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ৮৯ জন, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইল ৪৩৩ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২১৫ জন, খিদমাহ হাসপাতালে ৯৮ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮৬ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ২১৫ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে ১১৬ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১২ জন, বিআরবি হাসপাতাল লিমিটেড ৮৬ জন, আজগর আলী হাসপাতালের ১৫৯ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪০ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতাল এ২৪৪ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২১ জন ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ২৩ জন ভর্তি হন। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ হাজার ২২৯ জন।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় টনক নড়েছে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গু মশার প্রজননস্থল ধ্বংস ও আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আগামী ২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের অধীনে মশক নিধন সপ্তাহ পালিত হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ জানান, গত কয়েকদিন যাবত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। মঙ্গলবার দুপুরে আলাপকালে তিনি বলেন, এখন থেকে প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সভায় মিলিত হবেন।
Advertisement
এ ছাড়া ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করবেন।
এমইউ/এমআরএম