অপারেশন ক্লিনহার্ট নামে পরিচালিত অভিযানের কার্যক্রমকে দায়মুক্তি দিয়ে করা আইনকে বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রোববার এই রায় দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। মামলাটি সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকার (কজলিস্ট) আট নম্বরে ছিল।২০১২ সালে করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে অপারেশন ক্লিনহার্ট নামে পরিচালিত বহুল আলোচিত অভিযানের কার্যক্রমকে দায়মুক্তি দিয়ে করা আইনটি কেন সংবিধানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই অভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, রুলে তা-ও জানতে চাওয়া হয়।দায়মুক্তি দিয়ে করা আইনটি নিয়ে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ রুল জারি করেন।আইন, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্রসচিব, সেনা সদর দফতরের কমান্ডার ইন চিফ অব আর্মড ফোর্সেস ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অপারেশন ক্লিনহার্ট নামে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। ওই অভিযানে চলা কার্যক্রমকে দায়মুক্তি দিয়ে ২০০৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন-২০০৩ জারি করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ২০১২ সালে ১৪ জুন হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক।শুনানি শেষে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করেছে। ওই আইনের ১৪ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে কেউ নির্যাতিত হলে ও এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ প্রদানে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ফিলিপাইনে এটা করা হয়েছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এ ধরনের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে অনেক রায় দিয়েছেন। যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন। রিট আবেদনকারী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ওই আইনে বলা হয়, অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত কেউ কোনো আদালতে প্রতিকার চাইতে পারবে না। কারো বিরুদ্ধে মামলা বা বিচার প্রার্থনা করা যাবে না। এটা সংবিধানের মৌলিকতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। নির্যাতিত হবে, খুন হবে কিন্তু প্রতিকার চাওয়া যাবে না-এর চেয়ে কালো ও খারাপ আইন হতে পারে না। কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের আইন থাকতে পারে না। বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ড আইনের শাসনের পরিপন্থী। এ কারণে আইনটি চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। অপরেশন ক্লিনহার্ট সংঘটনের দীর্ঘদিন পর রিট আবেদন করার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। পাশাপাশি সমমনা মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ও সময়োপযোগিতা বিবেচনা করে রিটটি করা হয়।এফএইচ/একে/আরআইপি
Advertisement