আইন-আদালত

যমুনার কাভার্ডভ্যানে সার্জেন্ট নিহত: ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রিট

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চাপায় ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুতে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়েছে।

Advertisement

সোমবার (২২ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিহত গোলাম কিবরিয়ার বাবা ইউনুস আলী সর্দারের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ ফয়েজউল্লাহ ফায়েজ এ রিট আবেদন করেন।

রিটে যমুনা গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চাপায় ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার মৃত্যুতে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার পরিবারকে পারিবারিক খরচ মেটানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), বরিশালের পুলিশ কমিশনার, বরিশাল ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল, যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম, যমুনা ইলেক্ট্রনিক্স ও অটো মোবাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জলিল মিয়াকে বিবাদী করা হয়েছে।

Advertisement

এ বিষয়ে আগামী ২৮ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।

এর আগে গত ১৫ জুলাই সকাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের কর্ণকাঠি জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পটুয়াখালীগামী যমুনা গ্রুপের বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ডভ্যানকে (ঢাকা-মেট্রো-উ-১২-২০৫৪) থামার সংকেত দেন সার্জেন্ট কিবরিয়া।

কাভার্ডভ্যানটি ট্রাফিকের সংকেত অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সার্জেন্ট কিবরিয়া একটি মোটরসাইকেলে ধাওয়া করে কাভার্ডভ্যানটির সামনে গিয়ে ফের তাকে থামার সংকেত দেন। কাভার্ডভ্যানচালক জলিল মিয়া এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী সার্জেন্ট কিবরিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তার দুই পায়ের চারটি স্থান ভেঙে যায় এবং মূত্রথলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির নলছিটি থানা পুলিশ ধাওয়া করে চালক জলিল সিকদারসহ কাভার্ডভ্যানটি আটক করে।

Advertisement

কিবরিয়ার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিবরিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর পরপরই তাকে জরুরি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরদিন সকালে আইসিইউতে মারা যান গোলাম কিবরিয়া।

ফয়েজউল্লাহ ফায়েজ সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেছি। আজ মঙ্গলবার সেটি আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত আগামী ২৮ জুলাই শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

২০১৫ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি।

গত ১৫ জুলাই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে চলতে থাকা যমুনা গ্রুপের একটি কাভার্ডভ্যানকে তিনি থামার সংকেত দেন। কিন্তু চালক না থামিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী কিবরিয়াকে চাপা দেয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে সেদিন জানানো হয়।

গুরুতর আহত কিবরিয়াকে ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ১৬ জুলাই তিনি মারা যান। ওই কাভার্ডভ্যানের চালক মো. জলিল মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ ইতোমধ্যে একটি মামলা করেছে।

বেপরোয়া যান চালনা, সংকেত না মানা, সরকারি কাজে বাধা দেয়া, সরকারি সম্পত্তির (মোটরসাইকেল) ক্ষতিসাধন, হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণসহ সাতটি ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে ওই মামলায়। কিবরিয়ার বাবার করা রিট আবেদনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে এবং ১০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- সেই মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।

দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক নিয়মগুলো কঠোরভাবে মেনে চলতে এবং ট্রাফিক সার্জেন্ট, ট্রাফিক পুলিশদের কাজে নতুন আইন প্রয়োগ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- সেই প্রশ্নের উত্তরও চাইতে বলা হয়েছে রুলে। পাশাপাশি রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়ার পরিবারকে পারিবারিক খরচ মেটানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এফএইচ/বিএ/এমএসএইচ/এমকেএইচ/জেআইএম