২০১৩ সালের আগে কখনো সত্যিকারের ক্রিকেট বল দিয়ে খেলেননি। পাড়া-মহল্লায় টেপ টেনিস দিয়ে খ্যাপ খেলাই ছিলো তার নেশা। বিনিময়ে প্রতি ম্যাচের জন্য পেতেন মাত্র ২০০ রুপি করে। সেই ডানহাতি পেসার নভদ্বীপ সাইনিই এবার ৬ বছরের মাথায় খেলতে নামবেন ভারতের জাতীয় দলের হয়ে।
Advertisement
নজর কেড়েছেন আরও আগেই। ২০১৭-১৮ মৌসুমের রঞ্জি ট্রফিতে দিল্লীর হয়ে তার আগুন ঝরানো বোলিং মুগ্ধ করেছিল সবাইকে। আর সবশেষ আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে খেলতে নেমে বিশ্ববাসীকেও জানান দিয়েছেন নিজের গতির ঝড়।
এবারের আইপিএলের প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই ভারতীয় বোলারদের মধ্যে দ্রুততম ১৫২.৮৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সাইনি। এমনকি শেন ওয়াটসনের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও ভড়কে গিয়েছিলেন তার গতির সামনে। ১৫১ কিমি গতির এক বাউন্সার সরাসরি আঘাত হেনেছিল ওয়াটসনের হেলমেটে।
পুরো টুর্নামেন্টে ১৩ ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছিলেন ১১টি। তবে প্রতি ম্যাচেই গতির তোড়ে কাঁপন ধরিয়েছেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। যে কারণে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে তাকে নেট বোলার হিসেবে সঙ্গে নিয়েছিল ভারত। পরে 'এ' দলের সঙ্গে পাঠিয়ে দেয়া হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে।
Advertisement
আর এবার পুরোদস্তুর জাতীয় দলের হয়েই নামবেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে। ভারতের আসন্ন ক্যারিবীয় সফরের ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন হরিয়ানার ২৬ বছর বয়সী দীর্ঘদেহী পেসার নভদ্বীপ অমরজিত সাইনি। তার এ উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নিঃসন্দেহে ভারতের সাবেক অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের।
তবে এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরই জাতীয় দলে তার প্রথম ডাক নয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক টেস্টের জন্যও ডাক পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেবার খেলার সুযোগ হয়নি। তবে এবার যেহেতু ওয়ানডে স্কোয়াডে নেই জাসপ্রতি বুমরাহর মতো নিয়মিত বোলার, তাই সাইনির অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা বেশ জোরালোই বলার চলে।
ছয় বছর আগেও টেপ টেনিস ক্রিকেটে খ্যাপ খেলা পাড়ায় ক্রিকেটার থেকে, স্বপ্নের জাতীয় দলে আসার পথে অন্তত দুইজন মানুষকে ধন্যবাদ দিতেই হবে সাইনির। অতি অবশ্যই দিল্লীর নেটে তাকে প্রথমবার দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলেন গম্ভীর। তবে তাকে দিল্লির নেটে আনার কৃতিত্ব সুমিত নারওয়ালের। যিনি টেপ টেনিসের টুর্নামেন্ট কার্নাল প্রিমিয়ার লিগ থেকে সাইনিকে উঠিয়ে এনেছিলেন দিল্লির নেটে। সে টুর্নামেন্টেও ২০০ টাকা প্রতি ম্যাচে খ্যাপ খেলছিলেন সাইনি।
সুমিত নারওয়ালের কল্যাণেই প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বল হাতে নেন সাইনি। দিল্লির নেটে বোলিং করেন তখন ফর্মের চূড়ায় থাকা গম্ভীরকে। ডানহাতি এ দীর্ঘদেহী পেসারের বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়ে যান গম্ভীর। তিনি এক জোড়া কেডস উপহার দেন সাইনিকে এবং নেটে নিয়মিত আসার পরামর্শ দেন। পরে গম্ভীরের পরামর্শেই ২০১৩-১৪ মৌসুমে সাইনিকে দিল্লির রঞ্জি ট্রফির দলে নিয়ে নেন নির্বাচকরা।
Advertisement
তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাইনিকে। এখনও পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৩ ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ১২০ উইকেট। লিস্ট 'এ' ম্যাচে ৪১ ম্যাচে রয়েছে ৬৫টি শিকার। ভারত 'এ' দলের হয়ে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজেও ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৮টি উইকেট। সে ধারাবাহিকতায় এবার তিনি গায়ে জড়াবেন স্বপ্নের জাতীয় দলের জার্সি।
এসএএস/এমকেএইচ