জাতীয়

‘হাঁটতেও পারত না, ফিডার খাইত, তারে নির্যাতন কইরা মাইরা ফালাইল’

ছোট্ট তিন শিশু। এক শিশু ঘুমাচ্ছে, অন্যজন খেলছে। চুপচাপ অরেকজন কেবল দেখছে। এই তিন শিশুকে নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বসে আছেন তাদের মা রাজিয়া সুলতানা।

Advertisement

সেখানে আরেক শিশু রয়েছে। নাম আয়েশা মণি। শরীরী উপস্থিতি নেই তার। ব্যানারে ছবি হয়ে আছে সে! গত শীতের এক সন্ধ্যার ঘটনা। গরম খিচুরি খাচ্ছিল দুই বছর বয়সী আয়েশা মণি। খাওয়া থেকে তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। তাই এখানে তার উপস্থিতি ছবিতে।

আরও পড়ুন : মুখে গামছা বেঁধে ৬৫ বছরের ঘুমন্ত বৃদ্ধাকে ধর্ষণ

শিশু আয়েশা মণিকে ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে তার তিন শিশু বোন ও মা রাজিয়া সুলতানা রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে তাদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন : পেশায় ইমাম, জিন তাড়ানোর নামে করতেন নারী-শিশু ধর্ষণ

ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ থাকা নাহিদ বর্তমানে কারাগারে। তবে প্রায় সাত মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেয়নি।

আরও পড়ুন : ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে নিয়ে ধর্ষণ

মা রাজিয়া সুলতানার অভিযোগ, নাহিদ প্রভাবশালী। ময়নাতদন্তে তিনি প্রভাব খাটিয়েছেন। তাই তার শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও ময়নাতদন্তে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে আসেনি।

Advertisement

ঘটনার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেয়ায় অভিযোগ থাকা নাহিদ পার পেয়ে যেতে পারেন বলেও আশঙ্কা রাজিয়া সুলতানার।

আরও পড়ুন : মেয়েকে ধর্ষণে স্বামীকে সহযোগিতা, সেই মা গ্রেফতার

এ বিষয়ে রাজিয়া সুলতানার বক্তব্য, ‘খালি শুনতাছি তদন্তই হইতাছে, তদন্তই হইতাছে। এরকম চাঞ্চল্যকর ঘটনা, সবাই জানে, তারপরও তদন্তই করতাছে। কবে যে বিচার শেষ অইব আর কবে যে আমি বিচার পামু। আজকে সাত মাস হয়ে গেছে, বিচার পাচ্ছি না।’

আরও পড়ুন : ধর্ষণের পর চাকরি দিতে না পেরে বিয়ের আশ্বাস

তিনি বলেন, ‘আজকে শিয়ান একটা মাইয়্যা হইত, বলতে পারতো সে গেছে। বা অন্য কোনো ঘটনা হতে পারত। এই বাচ্চা তো ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। কথাও ঠিকমতো বলতে পারে না। ফিটার খাইত আমার বাচ্চা। কোলে কইরা নিয়া ধর্ষণ কইরা, তিনতলা থেইকা ফালাইয়া মারল। সবাই দেখল, বললো– আর কী প্রমাণ চাই?’

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে রাজিয়া সুলতানা জাগো নিউজকে জানান, গেণ্ডারিয়ার সাধনার নিকেতনের গলিতে গত জানুয়ারিতেই উঠেছেন। এর পঞ্চম দিনের (৫ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে দুই বছর বয়সী আয়েশা মণিকে গরম খিচুরি খেতে দেন। নতুন বাসায় রান্না করার ব্যবস্থা না থাকায় বাসার মালিকের ওখানে গিয়ে রান্না করছিলেন। এর অল্প কিছুক্ষণ পরই তার বড় মেয়ে এসে জানায়, আশেয়া মণি নাই। এর মধ্যে আয়েশাকে কোলে করে নিয়ে যায় নাহিদ। ধর্ষণের পর হত্যা করে তাকে তিনতলা থেকে ফেলে দেয় সে।

রাজিয়া সুলতানা রান্নাঘর থেকে আসতে আসতেই স্থানীয় লোকজন আয়েশা মণিকে সেখানকার ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে তার শিশুসন্তানকে পাননি। ন্যাশনাল হাসপাতাল তাৎক্ষণিকভাবে আয়েশা মণিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়।

ঢামেকে গিয়ে আদরের আয়েশা মণিকে পান রাজিয়া সুলতানা। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজিয়া সুলতানা দাবি করেন, চিকিৎসকরা তাকে জানায় তিনতলা থেকে ফেলে দেয়ার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তখন পুলিশও একই কথা বলেছিল। কিন্তু অজানা কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আটকে যায়। তিন-চার মাস পর যখন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়, তাতে দেখা যায়, তার মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়নি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ হত্যা ও ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামি নাহিদের পক্ষে কাজ করছেন। নাহিদ অনেক টাকা-পয়সাও খরচ করছে। তাই সাত মাস পার হলেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদ মামলা থেকে প্রভাব খাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন রাজিয়া সুলতানা।

এই মায়ের দাবি, দুই বছর বয়সী তার কন্যাশিশুকে নির্যাতন, কষ্ট দিয়ে হত্যাকারীর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।

পিডি/এসএইচএস/এমএস