বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি না হওয়ায় শারমিন আক্তার আঁখিকে (২৯) সুরভী-৮ লঞ্চের কেবিনের মধ্যে শ্বাসরোধে হত্যা করেন কথিত প্রেমিক ফল বিক্রেতা মো. সুমন (৩২)। হত্যার পর সুমন সারারাত কেবিনে অবস্থান করেন এবং ভোরে বরিশাল লঞ্চঘাটে লঞ্চ পৌঁছলে কৌশলে পালিয়ে যান।
Advertisement
সোমবার বেলা দেড়টার দিকে বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে র্যাব-৮ এর সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর খান সজিবুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার সুমন ঢাকার সদরঘাটের ১ নম্বর গেটের সামনে ৭-৮ বছর ধরে ফল বিক্রি করে। অন্যদিকে আঁখি নারায়ণগঞ্জের আদমজী এলাকার অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেডে অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। প্রায় ছয় মাস আগে মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে আঁখির সঙ্গে সুমনের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্ক স্থাপনের আগে দুজনই তাদের আগের বিয়ে ও সন্তান থাকার কথা পরস্পরের কাছে গোপন করেন। তারা দুজন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার দেখা করেন।
তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর লঞ্চযোগে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য আঁখি ঢাকার সদরঘাটে আসেন। আঁখির জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন সুমন। এরপর তারা সুরভী-৮ লঞ্চের নিচতলার একটি স্টাফ কেবিন ভাড়া নেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বরিশালের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে। এ সময় আঁখি ও সুমন লঞ্চের একই কেবিনে অবস্থান করছিলেন। রাত ১১টার দিকে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আঁখিকে চাপ দিতে থাকেন সুমন । সে রাজি না হওয়ায় তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন সুমন। এ সময় ধস্তাধস্তি করতে থাকেন আঁখি। একপর্যায়ে সুমন আঁখিকে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর সুমন সারারাত কেবিনে অবস্থান করেন এবং ভোরে বরিশাল লঞ্চঘাটে লঞ্চ পৌঁছালে সুমন কৌশলে লঞ্চ থেকে নেমে যান। এরপর সব যাত্রী নেমে গেলেও আঁখির কেবিনটি আটকানো ছিল। লঞ্চের স্টাফরা ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে নৌবন্দর থানা পুলিশকে খবর দেন। শনিবার সকালে নৌবন্দর থানা পুলিশ এসে কেবিন থেকে আঁখির মরদেহ উদ্ধার করে ।
Advertisement
মেজর খান সজিবুল ইসলাম জানান, মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব-৮ এর সদস্যরা তদন্তে নামেন। লঞ্চের সিসি টিভির ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্য দিয়ে আত্মগোপনে থাকা সুমনকে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থেকে রোববার রাতে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ফল বিক্রেতা সুমন আঁখিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তাকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দের আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
নিহত শারমিন আক্তার আঁখি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের পুইয়াউটা গ্রামের বজলু বেপারীর মেয়ে এবং নারায়ণগঞ্জের আদমজী এলাকার অনন্ত অ্যাপারেলস লিমিটেডে অপারেটর পদে কর্মরত ছিলেন। প্রায় চার বছর আগে আঁখির সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ ঘটে। আঁখির একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। কন্যাসন্তানটি নানা বাড়ি বাকেরগঞ্জে থাকে।
অন্যদিকে গ্রেফতার সুমন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার সিপাহীবাড়ি এলাকার মো. মানিক সিপাহীর ছেলে। সুমন ঢাকার সদরঘাটের ১ নম্বর গেটের সামনে ৭-৮ বছর ধরে ফল বিক্রি করেন।
Advertisement
সাইফ আমীন/আরএআর/এমকেএইচ