অবশেষে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৩০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন নিয়ে চাঁদের দেশে পাড়ি দিয়েছে চন্দ্রযান-২। সোমবার কাউন্টডাউন শেষে স্থানীয় সময় ২টা ৪৩ মিনিটে এ যানটি যাত্রা শুরু করেছে।
Advertisement
গত ১৫ জুলাই উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে যাত্রা স্থগিত হয়েছিল। কারণ হিসেবে তখনই যান্ত্রিক ত্রুটির কথা জানিয়েছিল ইসরো। রকেট থেকে তরল গ্যাস নির্গত হওয়ার কারণেই ডানা মেলার ঠিক ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগেই স্থগিত করা হয়েছিল জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রির অভিযান।
এই রকেটের একটা ডাক নামও আছে। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী এই রকেটের ডাক নাম দেয়া হয়েছে ‘বাহুবলী’। জনপ্রিয় দক্ষিণী সিনেমা বাহুবলীতে কাঁধে পাথরের ভারী শিবলিঙ্গ তুলে নিয়েছিলেন বাহুবলী। চন্দ্রযানকেও যেন অনেকটা সেভাবেই মহাকাশে নিয়ে যাবে জিএসএলভি। এমন অভিনব নাম দেয়া হয়েছে এই রকেটের।
ইসরোর ওই রকেটে চেপেই চাঁদের অন্ধকার দিকের রহস্য উদ্ঘাটন করবে চন্দ্রযান-২। ইসরো জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পর পৃথিবীর চারদিকে ঘুরপাক খেয়ে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়বে এই যানটি। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ‘লুনার সারফেস’ বা চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে যানটি।
Advertisement
তবে জ্বালানি লিকের কারণে প্রথমবার এর উৎক্ষেপণ বাতিল হওয়ায় সব প্রক্রিয়ায় কিছু রদবদল এনেছেন বিজ্ঞানীরা। ওই সময় উৎক্ষেপণ থেকে অবতরণ পর্যন্ত ৫৪ দিন সময় ধার্য করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২২ দিন পৃথিবীর কক্ষপথে (আর্থ অরবিট) ঘুরপাক খাওয়ার কথা ছিল এই চন্দ্রযানের।
পরবর্তী ২৮ দিন চাঁদের কক্ষপথে (লুনার অরবিট) ঘোরার কথা ছিল এই চন্দ্রযানের। শেষের চারদিন চাঁদের ‘লোয়ার অটমোস্ফিয়ারে’ গতি কমিয়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর জমিতে অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘লুনার অরবিটের’ সময় কমিয়ে ২০ দিন করা হয়েছে। ফলে এবার পুরো অভিযানের সময়সীমা দাঁড়িয়েছে ৪৬ দিন।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদের মাটিতে সৃষ্টির আদি সময়ের ফসিল অবিকৃত অবস্থায় থাকতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই সর্বত্র নয়। চাঁদের যেসব জায়গায় সূর্যবিমুখ, শুধু সেখানেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যেহেতু বেশকিছু এলাকায় সূর্যরশ্মি সরাসরি পৌঁছায় না, তাই সূর্যের বিকিরণগত পরিবর্তনও সেখানে কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এতেই ফসিল অবিকৃত থাকবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযান-২ এর অভিযাত্রী যান ‘প্রজ্ঞান’ আধুনিক প্রযুক্তি মারফত খুঁজে বের করবে সেই তথ্যই। অন্তত এমন আশায় ৮৫১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে ইসরো। সেই সঙ্গে চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-১ যে জলকণার সন্ধান পেয়েছিল, তা নিয়ে আরও বিশদ গবেষণা করবে চন্দ্রযান-২।
Advertisement
এর মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে বরফের অস্তিত্ব সন্ধানের চেষ্টা যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ও রাসায়নিক খুঁজে বের করার চেষ্টাও। সেই সঙ্গে চাঁদের মাটিতে বিশেষ গভীরতা পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে তার তাপমাত্রা, কম্পনের প্রক্রিয়াও জানার চেষ্টা করবে ‘প্রজ্ঞান’। এসব কিছুই হবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে।
টিটিএন/এমএস