জাতীয়

গুজব গণপিটুনি বন্ধে সারাদেশের পুলিশকে বার্তা

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে মানুষের মাথা লাগবে- এমন গুজব ডালপালা মেলে শেষে গিয়ে ঠেকেছে ছেলেধরার হাতে। ফলাফল হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে অদ্ভুত এক পরিস্থিতি, দেখা দিয়েছে ছেলেধরা আতঙ্ক। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে স্রেফ সন্দেহের বশে ঘটছে গণপিটুনির ঘটনা। সম্প্রতি কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তি গণপিটুনিতে নিহত হওয়ায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

Advertisement

বিষয়টা নিয়ে দৃশ্যত উদ্বিগ্ন পুলিশও। ছেলেধরার গুজব বন্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এবং ব্লগগুলো নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছেলেধরা-সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিলে বা শেয়ার করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : মাথা কাটা, ছেলেধরা গুজবে ২১ গণপিটুনি : ৫ জনকে হত্যা

সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-অপারেশন্স) সাঈদ তারিকুল হাসান সারাদেশের পুলিশের ইউনিটকে এই বার্তা পাঠান।

Advertisement

বার্তায় উল্লেখ করা হয়, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ব্লগ এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছেলেধরা-সংক্রান্ত বিভ্রান্তিমূলক পোস্টে মন্তব্য বা গুজব ছড়ানোর পোস্টে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও পড়ুন : রাজধানীতে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নারী নিহত

বার্তায় মোট চারটি উপায়ে ছেলেধরার গুজব ও গণপিটুনি প্রতিরোধে পুলিশের ইউনিটগুলোকে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, স্কুলে অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়, ছুটির পর অভিভাবকরা যাতে শিক্ষার্থীকে নিয়ে যায় সে বিষয়ে নিশ্চিত করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা, প্রতিটি স্কুলের ক্যাম্পাসের সামনে ও বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, মেট্রোপলিটন ও জেলা শহরের বস্তিতে নজরদারি বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন : ছেলেধরা সন্দেহে নিহত রেনুর আমেরিকা যাওয়া হলো না

এছাড়া বার্তায় গুজব বন্ধে জনসম্পৃক্ততামূলক কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গুজববিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি, এলাকায় মাইকিং-লিফলেট বিতরণ, মসজিদের ইমামদের ছেলেধরা গুজববিরোধী আলোচনার নির্দেশনা।

এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের কোন ইউনিট কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে ফ্যাক্সের মাধ্যমে জানাতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন : ছেলেধরা সন্দেহে প্রতিবন্ধী বৃদ্ধাকে গণপিটুনি

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, চিঠিতে গুজব বন্ধে পুলিশের ইউনিটগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের পুলিশ সদস্যরা গুজব ও গণপিটুনি বন্ধে কাজ শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) শেখ নাজমুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপায়ে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলেছি। ডিএমপির ওয়েব পোর্টালে বিজ্ঞাপন পোস্ট করেছি, ডিএমপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। রাজধানীর অধিবাসীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যাতে কেউ অযথা আতঙ্কিত না হোন।

‘পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা লাগবে’ এই ভুয়া গুজব ছড়ানোকে সরকারের বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের অপচেষ্টা উল্লেখ করে শেখ নাজমুল আলম বলেন, কিছু সরকার বিরোধী গোষ্ঠী অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সমাজে অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য অপচেষ্টা-অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ডিএমপির প্রায় ৩২০টি বিটে উঠান বৈঠকের আয়োজন করেছি। যার ফলে এই গুজবকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গণপিটুনির ঘটনা বেশি ঘটার আশ থাকলেও বাস্তবে ঘটেনি।

তিনি সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান। ভিত্তিহীন গুজবকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করার পরামর্শও দেন।

'সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ধামরাই উপজেলা শাখার সভাপতি রবিউল করিম বলেন, সোমবার সকালে ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের পাবরাইল গ্রামে পাবরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচশত জনতা লাঠিসোটা এবং লোহার রড নিয়ে প্রবেশ করে।

তারা সব কক্ষ এমনকি বাথরুমও তল্লাশি করে কথিত ছেলে ধরার গুজবে। শিক্ষকদের কাছে থেকে সংবাদ পেয়ে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে আমি দেখলাম আসলে এটি একটি গুজব ছিল,' তিনি যোগ করেন।

স্থানীয়রা বলছে, সশস্ত্র লোকদের স্কুলে দেখে শিশু ও তাদের অভিভাবকরা ভীত হয়ে পড়েছিল।

উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু নির্মাণকাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে সম্প্রতি ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়, যাতে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল সরকার। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা শহরে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশি করে ‘শিশুর মাথা’ পাওয়ার পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। এ ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।

এআর/এনএফ/পিআর