তাওয়াফ মানে প্রদক্ষিণ বা চক্কর দেয়া। কাবা শরিফ ৭ বার প্রদক্ষিণ বা চক্কর দেয়াকে ১ তাওয়াফ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে ইসলাম। কিন্তু মুসলিমরা কেন সারা বছর দিন-রাত এ পবিত্র ঘরকে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ কেরে চলছে? এর তাৎপর্যই বা কী?
Advertisement
পৃথিবীতে মহান আল্লাহর প্রথম ঘর এ কাবা। এ ঘর তাওয়াফের কিছু কারণ ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো। হতে পারে এসব কারণেই মুসলিম উম্মাহ পবিত্র কাবা ঘরকে দিনরাত তাওয়াফ করে চলেছেন। আর তাহলো-
>> নিঃসন্দেহে (কাবা শরিফ) সর্ব প্রথম ঘর, যা মানুষের (ইবাদতের জন্য) তৈরি করা হয়েছে। সেটা হচ্ছে (এই ঘর) যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারাবিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৬)
>> পৃথিবীর নাভিস্থলে অবস্থিত লাটিমের মতো ঘূর্ণায়মান হচ্ছে পবিত্র কাবা শরিফ।
Advertisement
>> কাবা শরিফ আল্লাহর ঘর। এটি তার একত্ববাদের প্রতীক। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নির্দেশ দিচ্ছেন-‘অতঃপর তারা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, তাদের মানতসমূহ পূরণ করে এবং এ সুসংরক্ষিত ঘরের তাওয়াফ করে।’এ আয়াতে আল্লাহর ইবাদতের জন্য তেরি করা সবচাইতে পুরাতন ঘর তথা প্রথম ঘর কাবা শরিফকে বুঝানো হয়েছে। কেননা ইবাদতের জন্য নির্মিত পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘরই এটা।
>> কাবা ঘর তাওয়াফ মহান আল্লাহর কুদরতের এক বড় নিদর্শন। দুনিয়ার সব কাজ ঘড়ির কাটার অনুকূলে ডান দিক থেকে বাম দিকে হয়ে থাকে। অথচ পবিত্র কাব ঘরকে বাম দিক থেকে শুরু করে ডান দিকে অগ্রসর হতে হয়। কারণ-পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্যসহ প্রকৃতির সব কিছুই এমনকি মানুষের শরীরের রক্ত প্রবাহও ডান দিকে আবর্তিত হয়। আর আল্লাহর ঘর কাবা শরিফ তাওয়াফ কালে তাই পুরো প্রকৃতিকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়েই মুমিন মুসলমান কাবা শরিফ তাওয়াফ করে। আল্লাহর প্রশংসা করে। আল্লাহর মহত্ম ও বড়ত্ব ঘোষণা করে।
>> মানুষের কলব, যাকে হৃদপিণ্ড বলা হয়। এটির অবস্থান বুকের বাম পাশে থাকে। আর তাই কলবকে কাবার দিকে রেখেই বাম থেকে ডাইনে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা হয়। যাতে কলবে কাবার আকর্ষণ ও আল্লাহর একত্ববাদের প্রেম বেড়ে ওঠে।
>> হজ ও ওমরায় গমনকারীরা মহান আল্লাহর মেহমান। তাই মেজবানের কাছে আগমন ও বিদায় তার ঘরের থেকেই হওয়া আবশ্যক। তাইতো মক্কায় গিয়ে হাজিদের প্রথম কাজই হলো কাবা শরিফ তাওয়াফ (কুদুম) করা আবার বাড়ি ফেরার সময় (বিদায়ী) তাওয়াফ করা।
Advertisement
>> কাবা শরিফ তাওয়াফ বিশ্বনবির নবুয়তের অন্যতম প্রমাণও বটে। তাওয়াফের মাধ্যমে পৃথিবী ও সৌরজগতের ঘুর্ণায়নের ইঙ্গিত বহন করে। যা মহান প্রভুর নির্দেশে যেমন সৌরজগতে পরিচালিত হয় তেমনি দুনিয়াতে সৌরজগতের অনুকরণে আল্লাহর নির্দেশে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা হয়। আর এটিই বিশ্বনবির নবুয়তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রমাণ।
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এ ঘর তাওয়াফের আহ্বান করার জন্য এবং এ ঘরের আঙ্গিনা (মাতআফ তথা তাওয়াফের স্থানকে) পবিত্র রাখার জন্য। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেন-‘আর স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর (কাবা ঘরের) স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম। আর (তখন বলেছিলাম) আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, নামাজ আদায়কারী, রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখো।আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা দাও, তারা তোমারকাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের ক্ষীণকায় উটসমূহের পিঠে (সাওয়ার হয়ে), তারা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৬-২৭)
এ কারণেই মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পবিত্র নগরী মক্কায় এসেই আল্লাহের নির্দেশ পালনে ও নবুয়তের সত্যতার প্রমাণে পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করে।
আল্লাহর নির্দেশ পালনে যারা পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করে তাদের জন্য স্পেশাল ফজিলত ঘোষণা করা হয়েছে-
কাবা শরিফের যে কোনো (ফরজ কিংবা নফল) তাওয়াফই অনেক বড় সাওয়াবের কাজ। হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন কাবা শরিফর উপর ১২০টি রহমত নাজিল করেন। এ ১২০টি রহমতের মধ্যে শুধু তাওয়াফকারীদের জন্যই ৬০টি রহমত নির্ধারিত।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ ও ওমরাহ পালনকারীদের ফরজ তাওয়াফের পাশাপাশি অবসর সময়ে বেশি বেশি তাওয়াফ করার তাওফিক দান করুন। তাওয়াফের তাৎপর্য হৃদয় দিয়ে অনুভব করে আল্লাহ নৈকট্য লাভের তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত রহমত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর