বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। তবে কৌশলগত কারণে এ নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে না। দলের এমন সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
Advertisement
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানায় বিএনপি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। এমনকি দলের মধ্যে যারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের বহিষ্কার করা হয়। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি এখন তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে।
আরও পড়ুন >> এবার ঈদের আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি!
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এ সিদ্ধান্ত দলের নেতাকর্মীরা ‘কৌশলগত’ হিসেবে দেখছেন এবং এটা ‘ইতিবাচক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে এ সিদ্ধান্তের প্রতি সাধুবাদ জানিয়েছন তারা।
Advertisement
যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকা ঝাঁপা ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি এবং ওই ইউনিয়নের চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে প্রতীক ছাড়া ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। কারণ দলীয় প্রতীক থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের নৌকা প্রতীকের পক্ষে যারা থাকেন তারা প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হন। অনেক সময় ভোটাররাও কেন্দ্রে যেতে পারেন না। প্রতীক বরাদ্দ না থাকলে স্থানীয় নেতাকর্মী বা ভোটাররা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন। সেভাবে কারও রোষাণলে পড়তে হবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘এতদিন পর দল একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল সেটা দল বুঝতে পেরেছে। যে কারণে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া যেসব নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের ফলে স্থানীয় নির্বাচনে অনেক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সিদ্ধান্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনিপকে আরও শক্তিশালী করবে।’
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দে বিএনপি শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। কারণ প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে এ নির্বাচনে স্থানীয়দের মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য বিনষ্ট হয়। সে কারণে ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রতীক বরাদ্দ দেবে না। দলের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো প্রকার দ্বিমত নেই।’
Advertisement
আরও পড়ুন >> খালেদা-তারেকের বিকল্প কি জোবায়দা?
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল কি-না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কৌশলগতভাবে রাজনীতি করতে হয়। একটা রাজনৈতিক দলকে কৌশল নিয়ে চলতে হয়। উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়া, কৌশলগত একটা সিদ্ধান্ত ছিল দলের। দলের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা এখন অটুট রয়েছে।’
প্রতীক ছাড়া ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযমন খান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও একই কথা বলেন।
তারা বলেন, ‘দলীয় প্রতীক বরাদ্দের ফলে গ্রামে যে মারামারি-কাটাকাটি হয়, মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়, সামাজিক সম্প্রতি নষ্ট হয়; আমরা এসব চাই না। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা দলীয় প্রতীক বরাদ্দের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছি এবং আমরা প্রতীক বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
প্রতীক বরাদ্দ না দিলেও দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেয়া হবে বলে জানান খসরু।
কেএইচ/এমএআর/পিআর