জাতীয়

জবাবদিহিতার আওতায় মশা মারার কর্মীরা

ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী। এ আতঙ্ক থেকে রাজধানীবাসীকে মুক্তি দিতে নিজেদের তৎপরতা শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এদিকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক এডিস মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও মশক নিধন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছেন মেয়র।

Advertisement

মশক নিধনকর্মীরা ঠিক মতো ওষুধ ছিটায় না- নগরবাসীর এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার বাসিন্দারা এখন নিজেরাই জেনে নিতে পারবেন নিজ নিজ এলাকার মশক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য। এসব কর্মীদের নাম ও মোবাইল নম্বরের পাশাপাশি তাদের তদারক কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর যুক্ত করা হয়েছে ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে।

মশককর্মীরা ঠিক সময়ে এবং যথাযথ উপায়ে মশক নিধনে ওষুধ প্রয়োগ করছেন কি-না, তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে নির্ধারিত সাতজন প্রতিনিধি। ওষুধ বিতরণের পর তাদের মধ্যে অন্তত চারজন প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিতে হবে মশককর্মীদের।

ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ প্রক্রিয়ার ফলে নাগরিকরা আগে থেকেই অবগত থাকতে পারছেন যে, মশক নিধনকর্মীরা কোনো দিন কোন এলাকায় কাজ করবেন? কোনো অসঙ্গতি পেলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি ডিএনসিসি একটি অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে, যাতে মশক ওষুধ ছেটানোর যন্ত্রগুলোতে চিপ বসানো থাকবে। এসব চিপ থেকে জানা যাবে, কোন এলাকায় কোন সময়ে কতটুকু ওষুধ মশককর্মীরা দিয়েছেন। সব তথ্য সরাসরি অ্যাপে চলে আসবে।

Advertisement

মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি- এমন অভিযোগ তদন্তে এবং মশক নিধন কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি-না, তা তদারকি করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাত সদস্যের একটি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রধান করে সাত সদস্যের ওই কমিটি হবে। কমিটিতে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, ইমাম, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হচ্ছে।

জানা গেছে, কমিটি নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। একই সঙ্গে কোনো এলাকায় মশক নিধনের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না- এমন অভিযোগ এলে তা তদন্ত করবে কমিটি। এরপর মশক নিধনকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের কাছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করবে ওই কমিটি। ওষুধ বিতরণের পর কমিটির অন্তত চার প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিতে হবে মশককর্মীদের। ফলে তারা সম্পূর্ণভাবে জবাবদিহিতার আওতায় থাকবেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা নিধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এ কাজ আরও গতিশীল করতে ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও মশক নিধন বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মশক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির মশক নিধনকর্মী, সুপারভাইজাররা নিয়মিত কাজ করছে। প্রতিটি এলাকার মশক নিধনকর্মী, সুপারভাইজার ও মনিটরিং কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বর ডিএনসিসির ওয়েব সাইটে দেয়া আছে। যে কেউ তাদের ফোন করে এ বিষয়ে জানাতে পারবেন, পাশাপশি তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে।

মশক নিধনকর্মীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে প্রতিটি ওয়ার্ডে সাত সদস্যের একটি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে মশক নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক নির্বাচন, কার্যকারিতা পরীক্ষা, ক্রয় প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা এবং কীটনাশকের কার্যকারিতা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Advertisement

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহম্মাদ সাঈদ খোকন বলেন, আমরা ডিএসসিসির পক্ষ থেকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নাগরিকদের ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবা দিতে প্রস্তুত আছি। হটলাইন ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বর চালু করা হয়েছে, এখানে নাগরিকরা ফোন করলে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই নাগরিকের বাসায় চলে যাবেন। আমরা ৬৭টি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। বিভিন্ন এলাকায় ৪৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর্মীরা অবস্থান নেবেন। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করলে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা নেবেন। আর যদি ঘরে রেখে সুস্থ করানো যায় তাহলে সেই হিসেবে চিকিৎসাসেবা দেবেন।

আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা মাঠে থাকবেন। ডেঙ্গু ছাড়াও অন্য কোনো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হলে আমাদের হটলাইন ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাসায় চলে যাবেন- যোগ করেন মোহম্মাদ সাঈদ খোকন।

এদিকে মশক নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজধানীবাসী। প্রতি বছর মশক নিধন কার্যক্রমে দুই সিটি কর্পোরেশনের বাজেট বাড়ছে কিন্তু এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে দুই সিটি মিলিয়ে বরাদ্দ আছে ৪৭ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যয় ধরেছে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। ফগার, হুইল,স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশরেন চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় ধরেছে ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল,স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। এছাড়া কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নাম-মোবাইল নম্বর পেতে এখানে ক্লিক করুন

এএস/এমএআর/জেআইএম