আইন অনুযায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের লভাংশের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে দেয়ার কথা থাকলেও বেশির প্রতিষ্ঠানই তা মানছে না। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর কর্তৃক দেশের ২৩ জেলায় ২৮ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হলেও মাত্র ১৩০টি প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশের অর্থ জমা দেয় বলে জানা গেছে।
Advertisement
জানা যায়, সরকার কর্তৃক গঠিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে ৩৬০ কোটি জমা হয়েছে। এফডিআর হিসাবে রয়েছে ৩২৯ কোটি টাকা, মাদার অ্যাকাউন্টে আছে ৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্য থেকে ৯ হাজার ৯ জন অসুস্থ শ্রমিককে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। সাহায্য দেয়ার পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা।
সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সাব-কমিটির প্রথম বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রেজাউল হক এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আনিসুল আওয়াল এসব তথ্য জানান।
সাব-কমিটির আহ্বায়ক ইসরাফিল আলম এমপির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বেগম শামসুন নাহার অংশ নেন। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ কর্তৃক লভ্যাংশের ০.৫ শতাংশ দেয়ার বিষয়টি তদন্তপূর্বক অর্থ আদায়ের উপায় ও লভ্যাংশ শ্রমিকদের সঠিকভাবে সাহায্যের জন্য করণীয় নির্ধারণে এই সাব-কমিটি গঠন করা হয়।
Advertisement
বৈঠকের কার্যবিরণীতে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আনিসুল আওয়াল বলেন, ২০০৬ সালের ৬ জুলাই শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আইন কার্যকর হয়। ২০১০ সালে গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। ২০১৫ সালে তিনি যোগদান করে একটা অর্গানোগ্রাম তৈরি করে জনপ্রশাসনে নিয়ে অনুমোদন করেন। ১৮টা পদসহ এটা অনুমোদন হয়। ২০১৭ সাল থেকে এর সম্পূর্ণ কার্যকারিতা শুরু হয়।
তিনি ২০১৬ সালে ৩৭ জনকে আর্থিক সাহায্য করতে পেরেছেন। কারণ তখন ফান্ড তেমন ছিল না। আবার শ্রমিকরা বা শ্রমিক নেতারা সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতিটা জানতেন না। ফলে পত্রিকা এবং টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। ২০১৭ সালে প্রচুর আবেদন আসতে থাকে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসক হওয়ায় সে বছর প্রেসক্রিপশন বুঝে ৯২১ জনকে, এর পরের বছর এক হাজার ৪০৬ জনকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পেরেছেন। বিগত অর্থবছরে তিন হাজার ৮৩৩ জনকে এবং সব মিলিয়ে ৯ হাজার ৯ জনকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছেন। এ সময় তিনি কমিটিতে বিভিন্ন অর্থবছরে শ্রমিকদের যে আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয় তার একটি তালিকা উপস্থাপন করেন।
মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রেজাউল হক বলেন, আইন অনুযায়ী লভ্যাংশের ০.৫ শতাংশ আলাদা করে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমা দেয়ার কথা। নিয়মিতভাবে এ পর্যন্ত ১৩০টি প্রতিষ্ঠান তাদের লভ্যাংশের অর্থ জমা দিয়েছে। এছাড়া ১৭১টি প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের মধ্যে জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর কর্তৃক ২৩ জেলায় ২৮ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা হলেও মাত্র ১৩০টি প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশের অর্থ জমা দেয়। মাত্র ১৭৩টি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে লভাংশ জামা দিচ্ছে।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মো. রেজাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, মাত্র গুটিকয়েক শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের লভাংশ কল্যাণ তহবিলে দিচ্ছে। কীভাবে তাদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সংসদীয় সাব-কমিটির আহ্বায়ককে অনুরোধ করেছি।
সাব-কমিটি আহ্বায়ক ইসরাফিল আলম জাগো নিউজকে বলেন, হাতেগোনা কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই আইন মানছে। যারা মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবে সংসদীয় সাব-কমিটি। এই টাকাগুলো অসহায় গরিব মানুষের টাকা। তাই এর সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়া কল্যাণ বোর্ডের এবং ডিজির দায়িত্ব। তাই যে ব্যাংকগুলোর পজিশন সবচাইতে ভালো সেখানে টাকা জমা করার সুপারিশ করবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী ৫০ শতাংশ সরকারি ও ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে এই আইন সংশোধনের জন্য সুপারিশ করবে কমিটি।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সাব-কমিটির আহ্বায়ক বলেন, মূল টাকাতে কেউ হাত দেবেন না। লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অন্যান্য ব্যয় করতে হবে। আর প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক এবং তার পরিবার যেন টাকাটা পায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য তিনি মন্ত্রণালয় এবং শ্রমিককল্যাণ ফাউন্ডেশনকে পরামর্শ দেন। মহাপরিচালককে আবেদনপত্র মূল ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক বা তার স্ত্রী জমা দিচ্ছে না দালালচক্র জমা দিচ্ছে তাও তদারক করার পরামর্শ দেন।
এরপর মহাপরিচালক বলেন, কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আবেদন থাকে ভুয়া। কিন্তু তা প্রমাণ করা দুস্কর। তিনি নিজে ডাক্তার হওয়ায় বিষয়গুলো যাচাই- বাছাই করে যেটা ভুয়া মনে হয় তা ভুয়া লিখে বাদ দেন।
এইচএস/বিএ/পিআর