গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের সড়কগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার সবকটি সড়কেই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বন্যায় এসব রাস্তাঘাট ভাঙনের ফলে যেমন যানবাহনের সমস্যা হচ্ছে ঠিক তেমনি যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বন্যায় প্রায় ৮৪৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়ন, রঙ্গারচ ও সুরমা ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্রায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া পৌর শহরের কালিবাড়ি, জামাইপাড়া, উকিলপাড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় খানাখন্দ।
তাছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার সড়ক পানির তোড়ে ভেসে গেছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার শরিফপুর এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। পানিতে রাস্তাঘাটে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এতে আমাদের চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। দ্রুত এই রাস্তাঘাটগুলো সংস্কার করার দাবি জানাই।
Advertisement
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাম ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জ যাওয়া-আওয়া আমরার লাগি খুব কষ্ট হয়। রাস্তার জায়গায় জায়গায় গর্ত। আর গর্ত গুলো ছোট না, বড় বড় গর্ত।
সিএনজি চালক ওলি আহমেদ বলেন, বন্যার পর থেকে রাস্তাঘাটে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়। বিশেষ করি সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, আবার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা গুলোতে গাড়ি চলাচলে অনেক অসুবিধা হয়। রাস্তায় বিরাট বিরাট গর্ত তৈরি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা জয় তালুকদার বলেন, ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে পুরাতন বাস স্টেশন এলাকার রাস্তায় বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বালু আর পাথর দিয়ে কিছু গর্ত ঢাকার চেষ্টা করা হলেও আবার বৃষ্টি হলে এগুলো মিশে যাবে। আমরা চাই রাস্তাগুলো যেনো দ্রুত মেরামত করা হয়।
এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তথ্য মতে, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৬৬টি স্থানে প্রায় ১৮৪ কি.মি, শাল্লা উপজেলায় ২৩টি স্থানে ৪৫ কি.মি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৩০টি স্থানে ৬০ কি.মি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৪২টি স্থানে ১২৬ কি.মি., দিরাই উপজেলার ৯টি স্থানে ২৮ কি.মি., বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫১টি স্থানে ১৬৮ কি.মি., তাহিরপুর উপজেলায় ৩টি স্থানে ১৬ কি.মি., জামালগঞ্জ উপজেলায় ৬টি স্থানে ৬ কি.মি., জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০টি স্থানে ৭৫ কি.মি., ধর্মপাশা উপজেলায় ১৫টি স্থানে ৫০ কি.মি., ছাতক উপজেলায় ১০টি স্থানে ৫৮ কি.মি. রাস্তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলার মোট ২৭৫টি স্থানের ৮১৮ কিলোমিটার রাস্তায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ১১ উপজেলায় প্রায় ৯৬টি ব্রিজ ও কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে। যার আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা।
Advertisement
অন্যদিকে জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্য মতে, সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যায় প্রায় ৩০ কি.মি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । তাছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কেও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমেদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে আমাদের ৮১৮ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার থেকে আমাদের বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। এখনো অনেক সড়কে পানি। এই পানিগুলো কমে গেলে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করে দিবো।
জেলা সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় আমাদের সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কও রয়েছে। আনুমানিক হিসেবে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/জেআইএম