বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। তাদের এই অসন্তোষ খুবই যৌক্তিক। এ নিয়ে তারা আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকা অচল হয়ে পড়ে তাদের কর্মসূচির কারণে। কিন্তু ভ্যাট প্রত্যাহার বা এ নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। বরং এনবিআর এবং অর্থমন্ত্রীর অসংলগ্ন কথাবার্তায় আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে। ছাত্ররা আরও বিক্ষুদ্ধ হয়ে ভ্যাট প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান যত তাড়াতাড়ি স্পষ্ট হয় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য তা ততোই মঙ্গল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেটিকে ভ্যাট আইনের পরিপন্থি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এটা সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা। সেখানে শিক্ষার জন্য যদি ছাত্রদের ভ্যাট দিতে হয় এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই টিউশন ফি অনেক বেশি। তারওপর যদি ভ্যাট আরোপ করা হয় তাহলে তা হবে বোঝার ওপর শাকের আটির মত। এছাড়া এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে সচ্ছল পরিবারের সন্তানরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বিষয়টি পুরোপুরি সত্যি নয়। শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশ মধ্যবিত্ত বা নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের। আর সচ্ছল অসচ্ছল যাই হোক না কেন একটি অযৌক্তিক বিষয়কে কেন মেনে নিতে হবে?এছাড়া ভ্যাট নিয়ে সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট নয়। অর্থমন্ত্রী বলছেন, আরোপিত ভ্যাট দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে এনবিআরের পক্ষ থেকেও ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে একই কথা বলা হল। আবার অর্থমন্ত্রী শনিবার এক অনুষ্ঠানে বললেন, আগামী বছর থেকে ছাত্রদেরই ভ্যাট দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকেই একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে এক আশ্চর্য নীরবতা পালন করছে। তারা তাদের বিষয়টিও খোলাসা করে কিছু বলছে না। দু`একটি বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য বলছে তারা নিজেরাই ভ্যাট দিবে। সেক্ষেত্রে ছাত্রদের বক্তব্য হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে টাকাই দিক না কেন সেটা তো ছাত্রদের কাছ থেকে নিয়েই দিবে। সুতরাং শেষ পর্যন্ত ছাত্রদেরই ভ্যাটের বোঝা বইতে হবে। ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আজ রোববারও রাজধানীতে বিক্ষোভ করছে ছাত্ররা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে এক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীতে এমনিতেই যানজটে নাকাল মানুষ। এরওপর ছাত্র আন্দোলনের কারণে দুর্ভোগ যেন চরম আকার ধারণ না করে সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে সকল জটিলতার অবসান করতে হবে এখনই। এ বিষয়ে কালবিলম্ব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এইচআর/এমএস
Advertisement