ক্যাম্পাস

জবি ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে তদবির-লবিং

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার দীর্ঘ ছয় মাস পর নতুন করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামীকাল ২০ জুলাই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিও তৈরি করে দেয়া হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে তাদের সকল কার্যক্রম শেষ করে সম্মেলনের অপেক্ষায় রয়েছে।

Advertisement

পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে প্রায় প্রতিদিন ক্যাম্পাসে তাদের অনুসারীদের নিয়ে শোডাউন দিচ্ছেন। সম্মেলনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই পদপ্রত্যাশী নেতাদের দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে নিজেদের নামে অনেকেই বিশাল বিশাল ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে জানান দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন >> জবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বের আলোচনায় যারা

ক্যাম্পাসের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে লবিং-তদবিরও থেমে নেই। শীর্ষপদে আসার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে নেতারা মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু ভবন ও আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে ধরণা দিচ্ছেন। অনেকেই আবার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

Advertisement

এদিকে জবি ছাত্রলীগের শীর্ষপদে নিজেদের লোক বসাতে বিভিন্ন সিন্ডিকেটও সক্রিয় রয়েছে। নিজেদের পছন্দের লোককে বসাতে তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।

পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে বসা মানেই কোটিপতি হওয়া! এখানকার নেতারা ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড, লেগুনা স্ট্যান্ড, বিভিন্ন খাবারের দোকান, রেস্তোরাঁ, ফুটপাত, শো-রুম, ফটোকপি দোকান মালিক সমিতি, হাসপাতাল, কুরিয়ার সার্ভিস, কোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে নিয়মিত ও মাসিক চাঁদা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব স্থান থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকা আদায় হয়ে থাকে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় সকল ধরনের টেন্ডার বাগিয়ে নেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ আছে জবি শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীরা জানান, বিগত কমিটির নেতৃত্ব আসার আগে মেসের সিট ভাড়া পর্যন্ত ছিল না। অথচ নতুন নেতৃত্ব আসার পরপরই রাতারাতি তারা কোটিপতি হয়ে যান! এ কারণে জবি ছাত্রলীগের পদ পেতে এত লবিং-তদবির চলছে।

Advertisement

আরও পড়ুন >> যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢাললো শিক্ষার্থীরা

এছাড়া কেরানীগঞ্জে জবির নতুন ক্যাম্পাসের জন্য একনেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯০০ কোটি টাকার চেক জবি প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসের এসব কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন কাজ পরিচালনায় চলবে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য। তাই জবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার জন্য টাকা-পয়সা খরচ করতে কেউ কার্পণ্য করছেন না। নিজেদের কর্মীদের খাওয়ানো, অর্থ প্রদান, ব্যানার-ফেস্টুনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন পদপ্রত্যাশীরা। লবিং-তদবিরের জন্যও দুহাতে দেদারছে অর্থ খরচ করে যাচ্ছেন তারা।

জবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার জন্য বিতর্কিতরাও এবার তৎপর রয়েছেন। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, বাস-লেগুনা স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, অস্ত্র মামলার আসামি, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া, মারামারিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতরাও এবার প্রার্থী হয়েছেন। ছাত্রত্ব নেই এমন প্রার্থীও রয়েছেন কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশীর তালিকায়। বয়স গোপন করে অনেকেই আবার শীর্ষপদ বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

বিতর্কিত এসব বিষয় নিয়ে যদিও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলছেন, স্বচ্ছ, জনপ্রিয় ও যোগ্য প্রার্থীকেই জবি ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হবে।

আরও পড়ুন >> ২০ জুলাই জবি ছাত্রলীগের সম্মেলন

জবি ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম টিটন, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফরায়েজি, সৈয়দ শাকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসনে মুবারক রিশাদ, নাজমুল আলম, তারেক আজীজ, সহ-সভাপতি আল আমিন শেখ, উপমুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক (শরীফ-সিরাজ কমিটি) নাহিদ পারভেজ, সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির সদস্য আদম সাইফুল্লাহ, আনিসুর রহমান, শেখ মেহেদি হাসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আফসার, আসাদুল্লা আসাদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, আক্তার হোসেন, সাবেক সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম, সাবেক দফতর সম্পাদক শাহবাজ হোসেন বর্ষণ, সাবেক সহ-সম্পাদক মোল্লা আনোয়ার হোসেন (সজীব), উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সৈকতুর রহমান।

ইমরান খান/এমএআর/এমএস/এসআর