দেশজুড়ে

সজীবের মাথা কেটে নেয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না এলাকাবাসী

নেত্রকোণায় সজীব মিয়া (৭) নামে এক শিশুর গলা কেটে মাথা নিয়ে পালানোর সময় গণপিটুনিতে যুবক নিহতের ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নেত্রকোণা মডেল থানায় এই দুটি মামলা হয়।

Advertisement

এর মধ্যে নিহত শিশু সজীব মিয়ার বাবা রইছ উদ্দিন বাদী হয়ে গণপিটুনিতে নিহত রবিন মিয়ার (২৮) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে শিশু সজিবকে হত্যাকারী রবিনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নেত্রকোণা মডেল থানা পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এসআই) রফিক বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েক জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

এ ঘটনায় শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে শিশু সজীবকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে। অথবা পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকেও এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছেলে ধরা ও পদ্মা সেতুতে মাথা দরকার এমন গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যারা এ রকম মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচারণা চলানোর চেষ্টা করবে তাদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় আনা হবে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, রবিন মিয়া মাদকাসক্ত ছিলেন। তার নামে থানায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। রবিনের জব্দকৃত মুঠোফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত শেষে স্পষ্ট বলা যাবে হত্যার আগে শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল কি-না।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কাটলি এলাকায় রাস্তার পাশে একটি নির্মানাধীন ভবনের তিন তলায় টয়লেটে শিশু সজীবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর রবিন মিয়া সজীবের ছিন্ন মাথা একটি ব্যাগে করে চকপাড়া সুইপার কলোনিতে নিয়ে যান। সেখানে মদ খেতে গেলে স্থানীয়দের নজরে পড়েন। এ সময় রবিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ধাওয়া করে নিউটাউনের অনন্ত পুকুরপাড়ে তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে শহরের উত্তর কাটলি এলাকায় শিশু সজীব ও রবিন মিয়াদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, উভয় পরিবারের ভাড়া করা বাসায়ই তলাবদ্ধ। সজিবের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করতে বাবা রইছ উদ্দিন ও মা শরিফা আক্তার তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার আমতলায় গেছেন।

আর রবিনের বাবা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে বাড়িতে নেই। তার মাজেদা আক্তার থানা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনায় প্রতিবেশীরাও শোকাহত। স্থানীয় অন্তত পঁচিশ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিন মিয়ার বাবা এখলাস উদ্দিন কাটলি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তার আগে প্রচুর অর্থ সম্পদ থাকলেও বর্তমানে তিনি পেশায় রিকশাচালক। এক সময় এখলাছ উদ্দিন বেশ স্বচ্ছল ছিলেন। তার নিজস্ব বাসাসহ প্রচুর জায়গা-জমি ছিল, কিন্তু এখন নিঃস্ব। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ভাড়া বাসায় থাকেন। বর্তমানে রাজু মিয়ার বাসার একটি কক্ষে এক হাজার টাকা ভাড়ায় তিনি ১০ মাস ধরে আছেন। পাঁচ ছেলের মধ্যে রবিন মিয়া সবার বড়। এক ছেলে বিয়ে করে নরসিংদী থাকেন। আরেক ছেলে সিলেটে। ছোট দুই ছেলে পায়েল মিয়া ও হাসান মিয়া বাবা-মার সঙ্গে থাকেন।

বাড়ির মালিক রাজু মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া আক্তার, প্রতিবেশী সৌকত হোসেন জানান, রবিন মিয়া প্রায় পাঁচ বছর আগে সদর উপজেলার মইষাখালি গ্রামের মারুফা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তাদের চার বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বছর খানেক ধরে তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। মাদক সেবনের কারণে রবিনকে তার বাবা চার-পাঁচ মাস আগে পুলিশে দিয়েছিলেন। মাস দেড়েক আগেও রবিন জেল খেটে এসেছেন। প্রায় মাসখানেক আগে তাকে শিকলে তালা বেঁধে তার বাবা পুলিশে খবর দিতে চান। এ সময় রবিন ছুটে পালিয়ে যান। এরপর থেকে আর বাড়িতে আসেননি। তবে বিভিন্ন সময় তাকে এলাকায় ঘুরাঘুরি ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করতে দেখা গেছে।

Advertisement

শিশু সজীবরা যে বাসায় ভাড়া থাকতো সেই বাসার মালিক হিরা মিয়া জানান, দেড় মাস আগে সজিবের বাবা এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তাদের বাসায় থাকছেন। আগে পাশের একটি বাসায় তারা ভাড়া থাকতো। তবে কি কারণে, কেন সজীবকে রবিন হত্যা করলো তা বুঝা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, সজিবের বাবার সঙ্গে রবিনের বাবার ভালো সম্পর্ক। তারা একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান।

ওই এলাকার স্বপন মিয়া ও স্কুল শিক্ষক এমদাদ মিয়া বলেন, রবিন মাদক সেবনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েছিল। সে যা উপার্জন করতো তা সব সময় নেশা করে উড়িয়ে দিত। তবে শিশুটিকে হত্যার পেছনের কারণ বলা যাচ্ছে না।

কামাল হোসাইন/আরএআর/এমএস