দেশজুড়ে

পৃথিবী না দেখা দিদারুলের এইচএসসি জয়

জন্ম থেকেই দুই চোখ অন্ধ। তারপরও ইচ্ছাশক্তি প্রকট। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.২৫ পেয়েছে শরীয়তপুরের মো. দিদারুল ইসলাম (১৯)।

Advertisement

দিদারুল ইসলামের বাবা সিরাজুল ইসলাম খান জানান, ঠেলাগাড়িতে কাজ করেন তিনি। তার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলেকে ঢাকাতে কাজ শিখাচ্ছেন। অভাবের কারণে এক ছেলে দুই মেয়েকে পড়াশুনা করাতে পারেননি তিনি। দিদারুল ইসলাম তার বড় ছেলে। জন্ম থেকেই সে দুই চোখে দেখে না। তাই তাকে পড়াশোনার জন্য আংগারিয়া সমন্বিত অন্ধ স্কুলে দেয়া হয়। স্কুলটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ফ্রি পড়াশুনা। কিন্তু এসএসসি পাসের পর পরিবারের খরচে পড়াশুনা করাতে হয়। অভাবের সংসার চালিয়ে কোনো রকমে কষ্ট করে এইচএসসি পাস করালেও পরবর্তী লেখাপড়া কীভাবে করাবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।

দিদারুল ইসলাম শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বৈশাখীপাড়া গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম খানের ছেলে। তিনি শরীয়তপুর সরকারি কলেজ থেকে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। আংগারিয়া সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম আওতায় সমাজসেবা অধিদফতর থেকে সরকারি খরচে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আংগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ষষ্ঠ থেকে দশম আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। ২০১৭ সালে আংগারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে ৪.০৯ পেয়ে ভালো রেজাল্ট করে।

দিদারুল ইসলাম জানান, অন্যের ঘাড়ে বোঝা হয়ে না থেকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য শুরু করে পড়ালেখা। বড় হয়ে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষক হতে চান দিদারুল। দাঁড়াতে চায় তাদের পাশে।

Advertisement

তিনি বলেন, এইচএসসি পাস করেছি। কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারবো কীনা চিন্তায় আছি।

আংগারিয়া সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সমাজসেবা অধিদফতরের রির্সোস টিচার মো. এনামুল হক বলেন, আমরা প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া করিয়ে থাকি। পরের পড়ালেখাগুলো নিজেদের করতে হয়।

তিনি বলেন, আমি যত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করিয়েছি তার মধ্যে দিদারুল মেধাবী ছাত্র। ওর ভালো রেজাল্টে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ নয়। দিদারুল পিএসসিতে জিপিএ-৫, জেএসসিতে ৪.২৮ ও এসএসসিতে ৪.০৯ পেয়ে কৃতকার্য হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, দিদারুল অনেক ভালো ছেলে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে। আমি অনেক খুশি। তার অদম্য ইচ্ছাই তাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। আমি দোয়া করি দিদারুল ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করুক। বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করুক।

Advertisement

ছগির হোসেন/এমএএস/এমএস